দেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যাকবলিত জেলাগুলোর জন্য ২০ কোটি টাকার বেশি তহবিল ব্যয় করছে বিএনপি; এই টাকা দিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি এখন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের কাজে নেমেছে দলটি।
শুক্রবার সকালে ঢাকার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দলের ত্রাণ সংগ্রহ কমিটি সংবাদ সম্মেলনে আসে, যেখানে কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন এসব তথ্য অবহিত করেন।
তিনি বলেন, 'গত ২৫ (অগাস্ট) তারিখ থেকে আজ (শুক্রবার) অবধি আমরা বিএনপি এবং বিএনপি পরিবার মিলে প্রায় ২০ কোটি টাকারও অধিক নগদ টাকা এবং ত্রাণ সংগ্রহ করেছি।
'আমাদের ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্ণীপুর, কুমিলস্না দক্ষিণ, কুমিলস্না উত্তর, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার, চট্টগ্রামের একটা অংশ- এগুলো বন্যায় ওর্স্ট অ্যাফেক্টেড এরিয়া; পরবর্তীতে চাঁদপুরের কয়েকটা উপজেলা বন্যাকবলিত হয়।'
বন্যার শুরু থেকে বিএনপি মানুষের পাশে রয়েছে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, 'আমাদের প্রাথমিকভাবে কার্যক্রমটা ছিল বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধার করা। পরবর্তীতে ওই সময়ে মানুষকে খাবার সরবারহ করা। এই কাজগুলো দলের জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার নেতাকর্মী এবং সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতারা করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় নেই, তারপরও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে ছিলেন, থাকবেন।'
বিএনপি পরিবার ছাড়াও সাধারণ মানুষ, গৃহবধূ, রিকশাওয়ালা, সাধারণ শ্রমিক দিতে বিএনপির ত্রাণ কমিটির কাছে এগিয়ে এসেছে বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমরা প্রতিটি টাকার হিসাব রেখেছি, যারা ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন তাদের রশিদ দিয়েছি।
'অনেকে অনেক টাকা দিতে চেয়েছেন, অনেকের টাকা নেই নাই। তিনজনের টাকা ভুলে নিয়েছি, অজানা ছিল আমাদের। সেই টাকা, ত্রিশ লাখ টাকা আমরা ফেরত দিয়েছি। নৈতিকভাবে আমরা মনে করি, উনাদের টাকা নেওয়া সঠিক হবে না, নেওয়া উচিত হবে না। সে জন্য আমরা সেই সব মানুষের টাকা পে-অর্ডার করে ফেরত দিয়েছি। কাজেই আমরা ত্রাণ সংগ্রহে যেমন ট্রান্সপারেন্ট ছিলাম, ত্রাণ বিতরণেরও ট্রান্সপারেন্ট আছি।'
তিনি বলেন, 'আলস্নাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য এখনো পর্যন্ত ৬০ কোটি টাকার অধিক ত্রাণের একটি সেন্ট্রাল রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ফান্ড আছে বিএনপির, যা দীর্ঘদিন ধরেই আছে। সেটা এই মুহূর্তে জমা আছে। সেটা দিয়ে আমরা পুনর্বাসন কাজগুলো পরিচালনা করব। আমরা সেজন্য গণমাধ্যমসহ দেশবাসী এবং যারা ত্রাণ সহায়তা করেছেন, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।'
'ত্রাণ পুনর্বাসন কার্যক্রম প্রসঙ্গে'
জাহিদ বলেন, 'এখন পানি নেমে যাচ্ছে, দেখা দিচ্ছে রোগ-বলাই। কিছু সংক্রামক ব্যাধি আছে, উপদ্রম্নত এলাকাগুলোতে মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। আমাদের ডাক্তররা শুধু যাচ্ছেন তা নয়, পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ বিনামূল্যে সরবারহ করা হচ্ছে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সহযোগিতা করছেন।
'কৃষির অবস্থা খুবই খারাপ, পানিতে সব ভেসে গেছে; কৃষক বীজ পাবে কোথায়? আমরা ইসলামপুর, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল থেকে প্রচুর পরিমাণ ধানের বীজ বা ঝালা বলে; সেই বীজ ট্রাকে করে উপদ্রম্নত এলাকায় আমরা সরবরাহ করে ফেলেছি এবং কৃষকরা বীজ বপন শুরু করেছে।'
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশুদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহনির্মাণের সহযোগিতা করা হবে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, সেই কাজও শুরু করা হয়েছে।
দেশের পূর্বাঞ্চলে ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে ১৩৭ জন শহীদ হয়েছেন, তাদেরও এই তহবিল থেকে সহায়তা করা হবে বলে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
'বন্যা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যাবে না'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশকে ইঙ্গিত করলেও তাদের নাম উচ্চারণ না করেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়ই হবে। এই যে বন্যা দেখেছেন, এটা মানব সৃষ্ট। এর মাধ্যমে আমাদের মানুষগুলোকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে। এটা মোকাবিলা করে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়, বাঙালিরা তা জানে, বাংলাদেশের মানুষ তা জানে। কাজেই কেউ যদি চেষ্টা করে আমাদের এভাবে দাবিয়ে রাখবে অথবা আমাদের যে সার্বভৌমত্ব, আমাদের যে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা, সেটিকে দাবিয়ে রাখবে; বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বহির্প্রকাশকে গলা টিপে হত্যা করবে; সেটি সুদূর পরাহত, বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।'
কাজেই কোনো ষড়যন্ত্র সার্থক হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ছোট বন্যা দিয়ে কষ্ট দিয়েছেন কিন্তু মনে রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই মানুষের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা এটি কিন্তু পাবেন না।'
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য আবদুস সালাম, মীর সরাফত আলী সপু, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, কাজী আবুল বাশার, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আমিনুল হক, হাসান জাফির তুহিন, রেজাউল কবির পল এবং ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য সচিব দলের যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।