শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চট্টগ্রামে যুবলীগ কর্মী ফয়সাল-সুলাইমান গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম বু্যরো
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চট্টগ্রামে যুবলীগ কর্মী ফয়সাল-সুলাইমান গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের কোতোয়ালিতে আগস্ট মাসে সরকার পতন আন্দোলন চলাকালে অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে গুলি চালানো যুবলীগের কর্মী ফয়সাল প্রকাশ কিলার ফয়সাল ও সুলাইমান বাদশাকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব।

শুক্রবারর্ যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক শরীফ-উল-আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানাধীন পশ্চিম বাকলিয়া ডিসি রোড গণি কোলোনি থেকে কিলার ফয়সালকে এবং নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী থানাধীন নদনা ইউনিয়নের কালুয়াই গ্রাম থেকে সুলাইমান বাদশাকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব-৭ এর আভিযানিক দল।

র্

যাব জানায়, গ্রেপ্তার মাদক সম্রাট ফয়সাল প্রকাশ কিলার ফয়সাল দেওয়ান বাজার এলাকার মৃত ইসমাইল প্রকাশ লালু মিয়ার সন্তান। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। চট্টগ্রাম-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত কিলার ফয়সাল।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিজয় মিছিল চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালি থেকে লালদীঘিস্থ জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সাবেক দুইজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও অন্যান্য আরও ২৮ জন এজাহারনামীয় আসামিদের নির্দেশে কিলার ফয়সাল এবং ৩৮০-৪০০ জন অপরাপর আসামি আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এ সময় বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করা হয় এবং রাম দা, লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রদেরকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করা হয়। এতে মো. রবিন (১৪) নামে এক শিক্ষার্থীর বাঁ পায়ের গোড়ালিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে উপস্থিত ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দ্রম্নত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় ১৩০ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সূত্র জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর দুর্ধর্ষ ক্যাডার কিলার ফয়সাল মেট্রোপলিটন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। গত ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ান বাজার ভরাপুকুর পাড় এলাকা থেকে বাকলিয়া পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল ফয়সাল। সে ওই থানা এলাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমন হত্যা মামলার আসামি। বাকলিয়া থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অন্তত ১০টি মামলা ছিল ফয়সালের। তখন সে মামলা থেকে জামিনে এসে আবার শুরু করেছিল তার ত্রাসের রাজত্ব। এছাড়া ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই চট্টগ্রামে যুবলীগ নেতা ফরিদ হত্যা মামলায়ও পুলিশ কিলার ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে। কিলার ফয়সাল নিজের ক্ষমতার জানান দিতে নিজের গ্রম্নপের প্রধানকেও গুলি করতে এতটুকু হাত কাঁপেনি তার। নগরের চকবাজার ডিসি রোড, বাকলিয়া এলাকায় কিলার ফয়সালের ভয়ে কেউ টু শব্দ করতে পারত না। কথায় কথায় গুলি চালায় এই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী।

অন্যদিকে, গ্রেপ্তার সুলাইমান বাদশা চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

গত ৪ আগস্ট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে একে-৪৭ রাইফেল দিয়ে সুলাইমান বাদশা ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ছোড়ে। এ সময় চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমরান হোসেনের (২১) মাথায় কোপ মারে। সে কৌশলে তা প্রতিহত করলে তার বাঁ হাতের দুইটি আঙুল হাড়সহ আংশিক কেটে গুরুতর রক্তাক্ত যখম হয় এবং অপর একটি কোপ তার তলপেটে লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে সে মাটিতে পড়ে যায়। এ ঘটনায় তার পিতা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের করেন।

সুলাইমান বাদশা ফুটপাতে চাঁদাবাজি-ছিনতাই-ভাড়াটে সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসা সব অপকর্মের হোতা ছিল। চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন মোড় অবধি তার অপরাধের অভয়ারণ্য। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নাছিম উদ্দিন সোহেল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সুলাইমান বছরের পর বছর ধরে ওই এলাকায় নানা অপরাধ করে বেড়ালেও তার গায়ে তেমন আঁচড় লাগেনি। নগরীর দুই নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত অবৈধ ট্যাম্পো লাইন থেকে চাঁদাবাজি। নগরীর ফিনলে স্কয়ার, চিটাগং শপিং কমপেস্নক্স বিপস্নব উদ্যান হয়ে ২ নম্বর গেট কর্ণফুলী কাঁচাবাজার পর্যন্ত প্রায় দুইশ ভাসমান ভ্যানগাড়ি বসিয়ে অনুসারীদের দিয়ে প্রতিদিন চাঁদা উঠায় সুলাইমান বাদশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী সরকারের সময়ে নগরের দুই নম্বর গেট, ষোলশহর স্টেশন, তুলাতুলি, সিগনাল এলাকা, আল-ফালাহ গলি, মেয়র গলিসহ আশপাশ এলাকায় মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখল বেদখল, অপহরণ, অবৈধ গেস্ট হাউজ, অস্ত্র ব্যবসা, ভাড়াটে খুন করাসহ যত অপকর্ম হয়েছে সেগুলোতে সুলাইমান বাদশা গ্রম্নপের কেউ না কেউ জড়িত থাকে। তখন ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলত না।

র?্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক শরীফ উল আলম বলেন, কিশোর গ্যাং লিডার ও চট্টগ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী এবং মাদক সম্রাট ফয়সাল প্রকাশ ওরফে কিলার ফয়সাল একাধিক মামলার আসামি। বৃহস্পতিবার বিশেষ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে নগরের কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে সুলাইমান বাদশা ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে গুলি করার ঘটনায় হওয়া মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি। তিনি পলাতক ছিলেন। র?্যাব-৭ ওর্ যাব-১১-এর যৌথ অভিযানে তাকে নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে