ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ জাল টাকাসহ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব-১০)। যারা গুগল ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখে জাল নোট তৈরি করতো। পরে তা ফেসবুকের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে বিক্রি করতো।
শুক্রবার দুপুরের্ যাব-১০ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এম জে সোহেল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. গিয়াস উদ্দিন (২৭) ও রেদোয়ান শেখ ওরফে মুমিন (১৯)। তিনি জানান, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা ও চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩ লাখ দশ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার এবং একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি কিবোর্ড, একটি মাউস, ৪টি ক্যাবল, একটি রাউটার, একটি হেয়ার ড্রায়ার, একটি পাম্প এন্ড স্প্রে, একটি ফয়েল রোল, ৮ বোতল বিভিন্ন রঙের কালি, একটি স্টিলের স্কেল, ২টি কার্টার, ৩টি কার্টিং ফ্রেম, ১০০ পাতা কাগজ, নগদ ২ হাজার টাকা, পাকিস্থানি ৫০ রুপি ও ৩টি মোবাইলফোনসহ একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, একটি প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে জাল নোট তৈরি করে রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল। এই চক্রটি জালনোটের ব্যবসা করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।র্ যাব ওই প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর, বিকালে রাজধানীর লালবাগ ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা ও চুনকুটিয়া এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে এই ২ জনকে জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ জাল টাকা প্রস্তুত ও সরবরাহকারী চক্র। তারা ইউটিউব ও গুগলসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে জাল টাকা তৈরির সার্বিক দক্ষতা অর্জন করে। অতঃপর তারা উচ্চভিলাষী অভিপ্রায় ও কম সময়ে অল্প পুঁজিতে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে জাল টাকা প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে তারা জাল টাকা তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় করে এবং জাল টাকা সরবরাহের জন্য জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহকারী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজ ও গ্রম্নপে সংযুক্ত হয়। অতঃপর ফেসবুক গ্রম্নপ হতে কমেন্ট দেখে তাদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে। জাল টাকা সরবরাহের ক্ষেত্রে তারা অগ্রিম টাকা নিয়ে নিত এবং পরবর্তীতে তাদের সুবিধাজনক স্থানে জাল নোটগুলো সরবরাহ করতো।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, চক্রটি বিভিন্ন সময়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরিকৃত জাল নোট সরবরাহ করত। তারা প্রতি ১ লক্ষ টাকা মূল্যের জাল নোট ১৫-২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। বিশেষ করে মাছ বাজার, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে নানান কৌশল অবলম্বন করে জাল নোট সরবরাহ করতো। এছাড়াও তারা অধিক জনসমাগম অনুষ্ঠান বিশেষ করে বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা ও কোরবানির পশুর হাট উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ জাল নোট ছাপিয়ে ছিল বলে তথ্য প্রদান করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জাল নোট প্রিন্টিংয়ের সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয় ফেলত। এ পর্যন্ত তারা বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১-২ কোটি টাকা মূল্যমানের জালনোটের ব্যবসা করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।