বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে চলা শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পণ্য উৎপাদনে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তা পূরণ করতে ছুটির দিন শুক্রবারও গাজীপুরের প্রায় ২৫ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল। এদিন সকাল থেকেই কারখানাগুলোয় পুরোদমে চলেছে উৎপাদন কার্যক্রম। তবে এখনো চালু হয়নি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা ৭টি কারখানা।
শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসেন বলেন, মূলত শুক্রবার পোশাক শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তবে ঝামেলার কারণে অনেক কারখানায় কয়েকদিন উৎপাদন বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে পণ্যের শিপমেন্টের সময় ঘনিয়ে এসেছে। সময়মতো শিপমেন্ট দিতে না পারলে তাদের কোটি টাকা ক্ষতি হবে। তাই শিপমেন্টের কাজ উঠিয়ে নিতে গত শুক্রবারের মতো কারখানা খোলা রেখেছেন অনেক মালিক। তারা ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। ছুটির দিন কাজ করলেও শ্রমিকদের কোনো ক্ষতি নেই। বরং এজন্য তারা আলাদা পারিশ্রমিক পাবেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের ঝামেলার খবর পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, শুক্রবার গাজীপুর মহানগর ও মহানগরের বাইরে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল। এসব কারখানায় সকাল থেকে চলেছে কার্যক্রম। এর আগে গত শুক্রবার খোলা ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ কারখানা। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা কারখানাগুলো খোলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২১ আগস্ট ৬ দফা দাবিতে গাজীপুরে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন টঙ্গীর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। ধীরে ধীরে অশান্ত হয়ে ওঠে গাজীপুর। বিভিন্ন দাবিতে অন্য কারখানায়ও শুরু হয় আন্দোলন। এরপর থেমে থেমে প্রায় প্রতিদিনই চলে আন্দোলন। দাবি আদায়ে কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব কারণে সাধারণ ছুটি ও অনির্দিষ্টকালের জন্য অনেক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয় অনেক কারখানার। মূলত এসব ঘাটতি পুষিয়ে নিতেই আজ খোলা রাখা হয়েছে অনেক কারখানা।
গাজীপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর জানায়, গাজীপুরে মোট নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) কারখানা ১ হাজার ১২০টি এবং অন্যান্য কারখানা ১ হাজার ৫১৩টি। এ ছাড়া অনিবন্ধিত কারখানা আছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। সব মিলিয়ে এসব কারখানায় ২২ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন।
এখনো বন্ধ ৭ কারখানা
বকেয়া বেতন ও বিভিন্ন দাবিতে এখনো গাজীপুরের সাতটি পোশাক কারখানা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানা খোলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এর মধ্যে তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, আর চারটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুজন কর্মকর্তার পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবির মুখে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় নগরের হাজি পুকুর এলাকার ফুল এভার বিডি লিমিটেড কারখানা। সহিংসতা ও কারখানায় বেআইনি ধর্মঘটের কারণে গত বুধবার বন্ধ ঘোষণা করা হয় কুনিয়া এলাকার সিনড্রেলা ফ্যাশন লিমিটেড কারখানা। শ্রমিকদের ১৪ দফা দাবির মুখে ১৫ আগস্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয় বাঘেরবাজার এলাকার হাই ফ্যাশন লিমিটেড কারখানা। এ কারখানাগুলো খোলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বেতন পরিশোধে ব্যর্থতার কারণ দেখিয়ে ১৫ আগস্ট থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে চারটি কারখানায়। এর মধ্যে আছে নগরের মোগরখাল এলাকার বেসিক ক্লোথিং লিমিটেড, একই এলাকার টি এন জেড অ্যাপারেল লিমিটেড, ঝাঁজরের বেসিক নিট ওয়্যার লিমিটেড ও কালিয়াকৈর চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানা।
এরই মধ্যে বেতনের দাবিতে গত মঙ্গলবার গাজীপুর-টাঙ্গাইল সড়কের চন্দ্রা মোড় এলাকায় নায়াগ্রা টেক্সটাইল লিমিটের শ্রমিকরা এবং ১৪ সেপ্টেম্বর কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন টি এন জেড অ্যাপারেল লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। এ ছাড়া বাকি দুই কারখানার শ্রমিকরাও বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে কারখানাগুলো দ্রম্নত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।