বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'আমরা যদি আওয়ামী লীগের মতো শুরু করি, তাহলে কি আমরা থাকতে পারব? আমাদেরও একই রকম দশা হবে।'
বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার একটি মাদ্রাসা মাঠে সম্প্র্রীতি ও গণতন্ত্র রক্ষায় পতিত হাসিনা সরকার ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের জন্য আওয়ামী লীগ আয়নাঘর বানিয়েছিল। এই ভয়াবহ দানব ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার দুই হাজার মানুষকে খুন করেছে। গুলিতে কারও হাত চলে গেছে, কারও পা চলে গেছে, কারও মাথার খুলি উড়ে গেছে। আজকে মুক্ত বাতাসে আমরা বাস করছি। কিন্তু মনে রাখবেন, সেই পর্যন্তই মুক্ত থাকবে, যত দিন আমরা স্বাধীন রাখতে পারব। আমরা যদি আওয়ামী লীগের মতো শুরু করি, তাহলে কি আমরা থাকতে পারব। আমাদেরও একই রকম দশা হবে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাছে অনুরোধ, আপনার নিজেদের মানুষের কাছে নিজেকে প্রিয় বানান। কারও ওপর অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন করবেন না।'
উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'দেশে যে বিজয় অর্জন হয়েছে, সেই বিজয় কিন্তু নষ্ট হতে দেবেন না। যে সুযোগ আসছে দেশকে সুস্থ করার, ভালো করার, সেটা যেন না হারাই।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আমাদের আমানত, তা আমাদেরকে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করতে হবে। তাদের দুর্গাপূজা যেন তারা উৎসবের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন, তা আমাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'গত ১৫-১৬ বছরে আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। এখন স্বৈরশাসক হাসিনা তীব্র ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে হেলিকপ্টারে করে পালিয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয় সীমা লঙ্ঘন করলে তার রক্ষা নাই। যারা দাপট দেখিয়ে শাসন করত তাদের প্রধান ভারতে পালিয়েছে। যারা আমাদেরকে জেলে দিত তারাই এখন জেলে ঢুকছে। আমরা শিক্ষা নেই, আলস্নাহর নির্দেশের বাইরে কিছু সম্ভব না।'
মির্জা ফখরুল হাস্যরস করে বলেন, 'ওবায়দুল কাদের নাকি পালাবেন না, এখন তিনি কোথায়, আসেন আমার বাসায় নাকি আশ্রয় নেবেন।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'বর্তমান সরকার বলছে, কিছু কিছু জিনিস আওয়ামী লীগ সরকার খুবই খারাপ করে দিয়ে গেছে। এর মধ্যে একটি হলো ভোটের ব্যবস্থা। এটা ঠিক করা দরকার। সবাই যাতে ভোট দিতে পারে। যার ভোট সেই দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে, এমন একটা ভোটের মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিনিধি নির্বাচন করব। এই সময়টুকু অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে দিতে হবে। তারা সবাই নিরপেক্ষ মানুষ, কোনো দল করেন না। কিন্তু দেশকে ভালোবাসেন। তারা কাজ শুরু করেছেন। আমাদের উচিত হবে তাদের সহযোগিতা করা।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'প্রশাসনের যারা ভালোভাবে কাজ করতে চান, তাদেরকে সবাই মিলে সাহায্য করুন। যে বিজয় এসেছে তা হেলায় হারাবেন না। ভারতের সাথে আমরা ভালো প্রতিবেশীর মতো থাকতে চাই; কিন্তু অন্যায় হলে আমরা প্রতিরোধ করতে পিছপা হবো না।'
হরিপুর উপজেলা সভাপতি জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ঠাকুরগাঁও জেলা সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুলস্নাহ মাসুদ, যুগ্ম সম্পাদক পয়গাম আলী, অর্থ সম্পাদক শরীফ হোসেন, ড্যাব মহাসচিব ডা. আব্দুস সালামসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের জেলা ও উপজেলা নেতারা।