অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে। এখন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বেশি নজর দিতে হবে।'
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ কথা বলেন। বুধবার প্রথমবারের মতো তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সভায় চারটি প্রকল্পের অনুমোদন হয়।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে। মেগা প্রকল্প না নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যরা এক হয়েছেন।'
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্পে চিন্তা দরকার। মেগা প্রকল্পও বাদ দিতে হবে। নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রকল্পের সবকিছু ওপেন থাকবে। শুধু পিডি জানবে তা নয়, সবাই জানবে। সামনে বড় প্রকল্প নয়, জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়া হবে।'
চার প্রকল্প অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ চারটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে 'বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)' প্রকল্পে ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া 'দুটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং দুটি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দলপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্প'তে ৫৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের 'পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)' এজন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এবং ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ইউনিসেফের অনুদান।
এ ছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের 'তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) (দ্বিতীয় সংশোধিত)' প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি, প্রকল্পের নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যয় পুনঃপ্রাক্কলন করার নির্দেশনা দিয়ে অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে দুই বছরের জন্য ১৬৩ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ব্যয়ও কমানো হবে।
অর্থ এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ; পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ; আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি উপদেষ্টা হাসান আরিফ; পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন; শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার; বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক পরিবহণ ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সংশ্লিষ্টরা সভার কার্যক্রমে অংশ নেন।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
বাতিল হচ্ছে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা : দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাতিল করছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা ছিল। তবে অন্তর্র্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন না।
বুধবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, 'নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আর করছি না। রাজনৈতিক সরকার এলে হয়তো করবে, কিন্তু আমরা করব না। কবে উন্নত দেশ হবো, কবে মাথাপিছু আয় কত হবে, এ পরিকল্পনা আমরা করব না'।