দেশের সামগ্রিক পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার উন্নতি বিধানকল্পে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও গবেষণা পরিচালনা করার লক্ষ্যে ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত 'জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট' (ঘঙঝঐঞজও) উদ্বোধন হয়েছে। জেলার রাজপাড়া থানার তেরখাদিয়ায় অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ এশিয়ায় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক একটি উলেস্নখযোগ্য স্থান হতে চলেছে।
মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান, সেনা কল্যাণ সংস্থা'র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. হাবিব উলস্নাহ, আইএলও'র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পুটিআইনেন; বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট'-এর হেড অফ প্রধান মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া প্রমুখ। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা, দেশি-বিদেশি উন্নয়ন অংশীজন, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. আবদুর রহিম খান।
অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায়ই শুনি বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে দুর্ঘটনার ফলে শ্রমিকরা আহত হচ্ছেন, নিহত হচ্ছেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমরা এসব দুর্ঘটনাকে সম্পূর্ণরূপে রোধ করতে পারছি না। তিনি বলেন, আমরা দায়িত্বভার নেওয়ার পরেই পস্নাজা ও তাজরীন ফ্যাশনের হতাহতদের সঙ্গে বসেছি, আলাপ-আলোচনা করেছি এবং হতাহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ৭ কোটি ৩০ লাখ শ্রমিক প্রতিদিন লড়াই করে যাচ্ছেন দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য। প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে সমৃদ্ধির পথকে ত্বরান্বিত করতে হলে মালিক-শ্রমিককে 'কালেক্টিভ অ্যাপ্রোচে' কাজ করতে হবে। আমাদের কাগজে-কলমে অনেক নিয়ম আছে; কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে দেশ নিশ্চিতভাবে উন্নতি করতে পারবে। এই নবনির্মিত ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে শ্রমিকদের মৃতর সংখ্যা কমে আসবে এবং শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করি। আমাদের সহযোগী দেশ এবং ডেভেলপমেন্ট পার্টনাররা তাদের সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখবে এই আশা ব্যক্ত করছি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ জোর দিতে হবে। আমরা আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে কাজ করার চেষ্টা করছি। বিদ্যমান শ্রম আইনকে সংস্কার করা নিয়ে এ সরকার কাজ করবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. আবদুর রহিম খান বলেন, 'দেশে শিল্প বিকাশের ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশির পেশাগত দুর্ঘটনা, স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা ঝুঁকির মতো সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে। এই সমস্যা নিরসনে উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে এই ইনস্টিটিউট। দেশের শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রম অধিকার রক্ষা ও উন্নত কর্মপরিবেশ বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানটি ভূমিকা রাখবে। ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিং ইমেজ বৃদ্ধি সহজতর হবে।'
আইএলও'র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পুটিআইনেন বলেন, 'আমরা আশা করি শ্রমিক, ব্যবস্থাপক ও নীতিনির্ধারকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি ঘঙঝঐঞজও শ্রমমান বিষয়ক জ্ঞান বিকাশ ও প্রসারের জন্য একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাদৃত হবে। আন্তর্জাতিক শ্রমমানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি তৈরির মাধ্যমে ঘঙঝঐঞজও পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক নতুন প্রজন্মের বিষেশজ্ঞদের গড়ে তুলবে।' সংবাদ বিজ্ঞপ্তি