গরমে অসুস্থ হওয়া শিশুদের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে
শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের মধ্যে থেকে ২৫৮ জনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮ জনই সর্দি কাশি ও জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে
প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ছুটির দিন সোমবার সকালেও রাজধানীতে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে তিনজন চিকিৎসক রোগী দেখছিলেন। তারা বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত ৭০ জন শিশুকে দেখে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৩ জন শিশু এসেছে জ্বর, ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে।
তাদেরই একজন রাজধানীর তালতলা এলাকা থেকে আসা মেহজাবিন আফরোজ। তিন মাস বয়সি এই শিশুকে নিয়ে এসেছেন তার মা তামান্না আখতার। বলেন, 'গত সাত দিন ধরে মেয়ের জ্বর, ঠান্ডা। তিন চার দিন ধরে সেটা আরও বেড়ে গেছে। সঙ্গে পাতলা পায়খানা হচ্ছে। কিছুই খেতে চায় না।'
সোমবার দিনের প্রথমভাগে তার মতো আরও মা ও অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটিতে রাজধানীর মিরপুর রোডে শিশু হাসপাতালে ভিড় করেছেন। সরকারি ছুটির দিনে হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তারা।
আগের দুই দিনের বৃষ্টিতে এদিন তাপমাত্রা কিছুটা কম, তবে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি। চিকিৎসককে দেখানোর অপেক্ষায় থাকা শিশুরাও গরমে ঘামছে। তাদের কেউ কান্না করছে, কেউ অস্থির হয়ে পড়ছে। অভিভাবকরা হাতে থাকা কাগজ দিয়ে তাদের গায়ে বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
চিকিৎসক ও অভিভাবকরা বলছেন, গত কয়েকদিনের তীব্র গরম প্রভাব ফেলেছে শিশু স্বাস্থ্যের ওপর। জ্বর, সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসা শিশুদের ভিড় বেড়েছে। গত কয়েকদিন আগের চেয়ে বেশি রোগী আসছে হাসপাতালে।
সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের মধ্যে থেকে ২৫৮ জনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮ জনই সর্দি-কাশি ও জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
এদিন সকালে শিশু হাসপাতালে তিন মাস বয়সি ছেলে রুমানকে নিয়ে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে এসেছেন তার বাবা-মা।
শিশুটির বাবা রায়হান উলস্নাহ বলেন, গরম বাড়ার পর তার ছেলে সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। শরীর বেশি খারাপ হওয়ায় শিশু হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। গত কয়েকদিন বেশ গরম ছিল, এরপর আবার বৃষ্টি। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ছেলের শরীরটা খারাপ করেছে, সে খুব ঘেমে যায়। অনেক ঠান্ডা-জ্বর, সঙ্গে কাশি। কাশতে কাশতে বমি করে দেয়। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারে না কাশির জন্য।
মুশরাফা মনজুর মাইরিন নামে এক বছর বয়সি এক শিশুর মা নাজনীন আরাফাত বলেন, তার মেয়ে প্রায়ই অসুস্থ হয়। শিশুটির ইমিউনিটি খুবই কম, প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে আবার গরম বেড়েছে। তিন দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এ জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
শাহরিয়ার হাসান নামে দুই বছর সাত মাস বয়সি আরেক শিশুর মা দিলরুবা ইয়াসমিন বলেন, 'গত এক মাস ধরে তার ঠান্ডা লেগে আছে। আর জ্বর আসছে এক সপ্তাহ আগে, জ্বরটা কমছেই না। মিরপুরের আরেকটা বেসরকারি হাসপাতালে দেখাইছিলাম। কিন্তু ভালো হচ্ছে না, তাই এখানে নিয়ে এসেছি।'
পাবনা থেকে সামিউল হাসান নামে তিন মাস ছয় দিন বয়সি এক শিশুকে নিয়ে আসা হয়েছে শিশু হাসপাতালে। তার হৃদযন্ত্রে কিছুটা সমস্যা আছে। পাশাপাশি গত কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দি থাকায় পাবনার চিকিৎসক তাকে শিশু হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
সামিউলের বাবা লেন, 'তার কাশি আর ঠান্ডা কমতেছে না। পাবনার ডাক্তার কইলো, তারে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগবে। আজ ভোরে রওনা দিছি, একটু আগে আইসা সিরিয়াল দিসি।'
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মুনীবুর রহমান জুয়েল বলেন, সোমবার হাসপাতালে অনেক রোগী এসেছে। তাদের বেশিরভাগ রোগী সর্দি-কাশি, জ্বরে আক্রান্ত।
তিনি আরও বলেন, 'কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে, এর আগে আবার বেশ গরম ছিল আবহাওয়া। এ কারণে শিশুরা এ ধরনের রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চাদের ঠান্ডা, জ্বর আমরা সব সময়ই পাই। কিন্তু আজ যেটা দেখছি, ঠান্ডা, কাশি নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা একটু বেশি। ব্রংকিওলাইটিস, নিউমোনিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গুর পেশেন্টও অনেক পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে পরীক্ষা করছে না, কিন্তু লক্ষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে ডেঙ্গু।'
এদিন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়েও দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র। এখানেও শিশু বিভাগে অনেক শিশুকে নিয়ে এসেছেন তাদের অভিভাবকরা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আসা সাফওয়ান নামে এক শিশুর মা সামিনা ইয়াসমিন বলেন, 'গত কয়েকদিন ধরে তীব্র জ্বর, কমেই না। এর মধ্যে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে প্রায়। হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়ায় ছেলের জ্বর হয়েছে।'
সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকাসহ ১৪ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কিছুটা কমে এসেছে। তবে সোমবার বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় অস্বস্তিকর গরম অনুভূত হয়েছে।
শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুলস্না বলেন, এখনকার আবহাওয়ায় ভ্যাপসা গরম হচ্ছে। কখনো বৃষ্টি হচ্ছে, আবার রোদ উঠছে।
তিনি আরও বলেন, 'এ সময় বাচ্চারা খুব ঘামে, আর বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবেই বেশি ছোটাছুটি করে বলে তাদের ঘাম আরও বেশি হয়। কিন্তু সমস্যাটা হয় আমরা বাচ্চাদের ঘাম মুছে দেওয়ার বিষয়ে অনেকটা উদাসীন। ঘাম গায়ে শুকিয়ে সর্দি-কাশি, নাক বন্ধ হয়ে যায়। কেউ কেউ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সংক্রমিত হলে জ্বর আসে, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হয়।'