টেলিটক ডিলার অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করেছে, টেলিটকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কোম্পানিটির ডিলারদের প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা আটকে রেখেছে। ডিলারশিপ বাতিল বা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেওয়ার পর নিয়মানুযায়ী তিন মাসের মধ্যে ডিলারদের জমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। অথচ বছরের পর বছর ধরে টাকা আটকে রেখেছে কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তা। আগামী সাত দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় সারাদেশের সব ডিলার টেলিটকের সিম বিক্রি থেকে শুরু করে সব মার্কেটিং কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে টেলিটক ডিলার অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়করা লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সমন্বয়ক মো. নূরুল ইসলাম ও মো. রেজাউল করিম জাহাঙ্গীর লিখিত বক্তব্যে বলেন, রাষ্ট্রীয় একমাত্র মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটক। 'টেলিটক আমাদের ফোন' এই সেস্নাগানকে বুকে ধারণ করে দেশের ১৯৮ জন ডিলার টেলিটক তথা রাষ্ট্রের লাভের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু অসাধু কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে টেলিটক ডুবতে বসেছে।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, দুর্নীতিতে জড়িতদের অধিকাংশ বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের আশীর্বাদপুষ্ট। যাদের অধিকাংশই টেলিটকের সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জড়িত। তাদের কারণে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ওইসব অসাধু কর্মকর্তারা কিছু বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়েছে। এসব ঘুষ দেওয়া হয়েছে টেলিটকের নেটওয়ার্ক দুর্বল করার জন্য। পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে টেলিটকের নেটওয়ার্ক দুর্বল করে রাখা হয়েছে। এতে করে স্বাভাবিক কারণেই গ্রাহকরা অন্য মোবাইল ফোন কোম্পানির সিমকার্ড ব্যবহার করছেন। রাষ্ট্র কোটি কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবেই টেলিটককে একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে দাঁড় করানো হয়েছে।
তারা বলছেন, এক সময় টেলিটকের সিমকার্ড কেনার জন্য মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা ছিল। নেটওয়ার্ক দুর্বল করে রাখার কারণে বর্তমানে বিনা পয়সায় টেলিটকের সিমকার্ড দিলেও কেউ নিতে চায় না। কারণ গ্রাহকরা জানেন, এটি নিয়ে কোনো লাভ নেই। নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। ইন্টারনেটের গতি কম। জরুরি প্রয়োজনীয় কাজ করা সম্ভব না। এছাড়া টেলিটক ইন্টারনেটের ভালো কোনো প্যাকেজ ঘোষণা হওয়ামাত্রই ওইসব অসাধু কর্মকর্তা টেলিচার্জ নেটওয়ার্ক ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য বন্ধ করে রাখত। টেলিটকের গ্রাহকরা কোম্পানিটির নিজস্ব অ্যাপস থেকে মোবাইল রিচার্জ করতে পারতেন না। এখানেও রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ নানা মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলে মোবাইল রিচার্জ করতেন। এতে করে টেলিটকের ডিলাররা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমন কৌশলে টেলিটকের অসাধু কর্মকর্তারা ওইসব মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন পেতেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিলার মাহবুবুর রহমান রাজু, ডিস্ট্রিবিউটর তোফায়েল হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন ও গোলাম মোহাম্মদ আবুল হাসনাত কেনেডিসহ টেলিটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।