দেশের তিন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজীপুরের কালীগঞ্জে শিশু ও নারীসহ পাঁচজন, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ব্যবসায়ীসহ দুইজন এবং পাবনায় অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হন। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
আমাদের গাজীপুর ও কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কালীগঞ্জে কাভার্ডভ্যান চাপায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছে। শনিবার রাত ১১টার দিকে টঙ্গী-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কের কালীগঞ্জের মূলগাঁও মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হলেন- নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার আখরাশাল এলাকার আব্দুর রহমানের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৭০) ও ছেলে মোহাম্মদ আলী (৫৫), মোহাম্মদ আলীর ছেলে আমান উলস্নাহ (৫), গাজীপুরের নোয়াগাঁও অষ্টগণ কলোনির সুবাস কর্মকারের ছেলে অমল কুমার কর্মকার (৩৯) এবং সাতক্ষীরা সদরের হাজিপুর এলাকার মগরব আলীর ছেলে নাজমুল হোসেন (৩৫)।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মূলগাঁও মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় রাত পৌনে ১১টার দিকে একটি কাভার্ডভ্যান চাপায় ঘটনাস্থলেই সিএনজি চালিত অটোরিকশার চার যাত্রী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় যাত্রী মো. আমান উলস্নাহ (৫) এবং সিএনজি চালককে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই শিশুকেও মৃতু্য ঘোষণা করেন। এছাড়াও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় সিএনজি চালকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। অটো চালকের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের লিডার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে এক নারীসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর চার বছরের এক শিশুর মৃতু্য হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক রেজিনা আফরিন বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমান উলস্নাহ নামের এক শিশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এ ছাড়াও মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আনা সিএনজি চালককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছে। মরদেহ পুলিশ হেফাজতে এনে নিহতের স্বজনদের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট ও শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি জানান,
চুনারুঘাটে গাড়িচাপায় দুই মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানের রামগঙ্গা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় সুদিয়াখলা এলাকার মৌলদ মিয়ার ছেলে ও শায়েস্তাগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ও ধান চাল ব্যবসায়ী হাফিজ সরকার (৩৫) এবং তালুগড়াই এলাকার কিম্মত আলীর ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান (৩০)।
চুনারুঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন যায়যায়দিনকে জানান, হাফিজ ও মোস্তাফিজুর একটি মোটর সাইকেলে চড়ে সাতছড়ি থেকে শায়েস্তাগঞ্জ ফিরছিলেন। পথে অজ্ঞাত কোন গাড়ি তাদের মোটর সাইকেলটিকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃতু্য হয়েছে। পরে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
চুনারুঘাট থানার ওসি হিলেস্নাল রায় দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, জেলার বাসের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ সময় অটোরিকাশার চালকসহ আরো ৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার সকাল ১১টার দিকে পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের সাহাপুর নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- পাবনা সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে শিমুল হোসেন (৩২) ও একই উপজেলার ইসলাম গাঁতি ভাটাপাড়া গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেনের ছেলে সফর আলী (৩৫)।
আহতরা হলেন- গাঁতি গ্রামের হামিদুল ইসলাম, রেজাউল করিম, সাহাপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম, ইসলাম গাঁতি গ্রামের ইসমাইল হোসেন, হারেছ আলী, রবিউল ইসলাম ও আব্দুল আজিজ।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, সকালে ব্যাটারীচালিত একটি অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া থেকে পাবনার টেবুনিয়ায় যাচ্ছিল। পথিমধ্যে সাহাপুর নামক স্থানে পাবনা থেকে ঈশ্বরদী অভিমুখে যাওয়া সাব্বির পরিবহণ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় অটোরিকশার সকল যাত্রী গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা আহতদের দ্রম্নত উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেবার পথে শিমুল ও সফর নামের দুইজন মারা যান। আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকি তিনজনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওসি আরও জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বাসটি নিয়ে পালিয়ে গেছে চালক। দুর্ঘটনা কবলিত অটোরিকশা পুলিশি হেফাজতে জব্দ করা হয়েছে। বিকাল পর্যন্ত হতাহত পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি।