ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের প্রশ্নটি এখন পর্যন্ত অনুমানমূলক (হাইপোথিটিক্যাল) বলে উলেস্নখ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জ্যাসওয়াল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্রিফিংয়ের বিবরণী অনুসারে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাংবাদিক ইয়েসি মুখপাত্রের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতে আছেন। তাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশি কিছু কর্মকর্তার মন্তব্যের খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো যোগাযোগ করা হয়েছে বা মৌখিক নোট পেয়েছে? এ ছাড়া এখানে শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক স্ট্যাটাস কী? তিনি কি রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন নাকি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? একটি স্পষ্টতার বিষয়ে জানতে চাই, তিনি কতদিন ভারতে থাকতে পারবেন? এ বিষয়ে কোনো কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা আছে কি?
জবাবে মুখপাত্র রণধীর জ্যাসওয়াল বলেছেন, প্রণয় আপনি প্রত্যর্পণ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। দেখুন, এ বিষয়ে আমরা আগেও বলেছি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি একটি অনুমানমূলক প্রশ্ন। আমি আগের সংবাদ সম্মেলনেও এ বিষয়ে আপনার প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। সুতরাং এখন পর্যন্ত প্রত্যর্পণের এ প্রশ্নটি আমাদের দৃষ্টিতে নিতান্তই অনুমানমূলক এবং আমরা এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর দেই না। এই ধরনের অনুমানমূলক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমাদের চর্চায় নেই।
মুখপাত্র আরও বলেন, আপনি যে স্ট্যাটাসের কথা বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, স্বল্প নোটিশে ও তার নিরাপত্তার জন্য এখানে এসেছিলেন। এর বাইরে জানানোর মতো আমার কাছে আর কোনো তথ্য নেই।
ব্রিফিংয়ে বার্তা সংস্থা পিটিআই সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি কিছু মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ভারতে অবস্থান করে হাসিনার রাজনৈতিক মন্তব্য এক ধরনের অবন্ধুত্বসূলভ আচরণ ও তাকে চুপ থাকতে হবে। তিনি আরও বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলকে একটি ইসলামি দল হিসেবে চিত্রিত করার যে আখ্যান, ভারতকে অবশ্যই সেটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এগুলো ড. ইউনূসের বেশ কড়া মন্তব্য। এই মন্তব্যগুলোকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
জবাবে জ্যাসওয়াল বলেন, দেখুন, বাংলাদেশের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমি আগেও স্পষ্ট করেছি এবং আজও ইয়েশির প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আমি স্পষ্ট করে বলেছিলাম যে, অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্র্বর্তী সরকার প্রধানের সঙ্গে আমাদের হাইকমিশনার সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। তখন ভারত উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাবে বলে জানিয়েছিলেন। তিনি আমাদের নিজ নিজ জাতীয় অগ্রাধিকার অনুযায়ী সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রম্নতিও দিয়েছিলেন। তাই বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমনই।
উলেস্নখ্য, ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এখনো ভারতে অবস্থান করছেন তিনি।
এর আগে বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'ভারতে কেউই শেখ হাসিনার অবস্থানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। আমরা তাকে ফেরাতে চাই। তিনি ভারতে আছেন এবং মাঝেমধ্যে তিনি কথা বলছেন, যা সমস্যাজনক। তিনি চুপ থাকলে মানুষ এটাকে ভুলে যেত। কিন্তু ভারতে বসে তিনি কথা বলছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন যা কেউ পছন্দ করছে না।'
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) জার্মানির বার্লিনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, 'আপনারা জানেন, বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। আমরা স্পষ্টতই এই সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। এটি আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে করি, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নয়।'