এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে ৭টি বিষয়ে নেওয়া পরীক্ষা আর অন্যগুলো বাতিলের কারণে ফলাফল কীভাবে প্রস্তুত হতে পারে, সে ব্যাপারে রূপরেখা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বোর্ডগুলো।
সপ্তাহখানেক আগে ফল মূল্যায়নের প্রস্তাব পাঠানো হলেও এখনো অনুমোদন না পাওয়ার কথা বলেছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
তিনি বলেন, 'উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল কবে নাগাদ দেওয়া হবে ও কোন প্রক্রিয়ায় ফলাফল তৈরি করা হবে, সে প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অনুমোদন পাইনি, পেলে আপনাদের জানাতে পারব।'
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংস পরিস্থিতিতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়। সরকার পতনের পর আরেক দফা সহিংসতায় বিভিন্ন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র পুড়ে যাওয়ায় পরীক্ষা আরও পিছিয়ে যায়।
স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নেওয়ার নতুন সূচি দেওয়া হলেও অন্তর্র্বর্তী সরকার তা আরও আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে অর্ধেক প্রশ্নে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরে পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে অনড় অবস্থান নিলে সরকার তাদের দাবি মেনে নেয়।
ফলে শিক্ষা কর্মকর্তাদের সামনে পরীক্ষা হওয়া সাতটি বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়গুলোর মূল্যায়ন নিয়ে এবার জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা গত ২১ আগস্ট বৈঠকে বসে দেড় মাসের মধ্যে ফল প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নিলেও স্থগিত পরীক্ষার মূল্যায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে পারেননি।
পরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাসার বলেন, 'ফল প্রস্তুত করতে দেড় মাস সময় লাগবে। কিছু খাতা পরীক্ষকদের কাছে পাঠানো বাকি আছে, সেগুলো আমরা পাঠাব।'
এ কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অটোপাসের কোনো সুযোগ নেই। স্থগিত পরীক্ষাগুলোর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়া হবে, যাতে তারা বঞ্চিত না হয়।
তিনি আরও বলেন, 'এবার অটোপাস হবে না। কারণ বাংলা, ইংরেজি দুই পত্র রয়েছে, পদার্থবিজ্ঞানের দুই পত্র, আইসিটি, যুক্তিবিদ্যা পরীক্ষা হয়েছে। এগুলোতে অনেকে খারাপ করে, তো সেক্ষেত্রে অটোপাসের কোনো সুযোগ নেই।'
স্থগিত পরীক্ষাগুলোর নম্বর দিতে কী কী পদ্ধতি খোঁজা হচ্ছে, জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, 'অনেকগুলো ফ্যাক্টর রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সাতটি পরীক্ষা দিয়েছে, এগুলোর একটি গড় নম্বরের ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া হতে পারে; সবচেয়ে ভালো নম্বর যেটা, সেটা দেওয়া হতে পারে; সেই ফল খারাপ হলে এসএসসিতে ফলের ভিত্তিতে; আর সেখানেও খারাপ ফল করলে জেএসসির ফলের ভিত্তিতে হতে পারে। এর মধ্যে কোনটা করব, সেটা পরামর্শক কমিটি সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে মূল কথা, সব সুবিধা শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকবে। কেউ যেন বঞ্চিত না হয়, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি। সোজা কথা শিক্ষার্থীরা যেন না ঠকে সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।'
দেশজুড়ে চলা প্রাণঘাতী সহিংসতায় কোনো উত্তরপত্র হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সে বিষয়ে ফলাফলের 'টেবুলেশন নীতিমালা' অনুসরণ করা হবে বলে জানান আবুল বাসার।
তিনি বলেন, 'তার তো অন্য বিষয়ের নম্বর আছে। সেই টেবুলেশন নীতিমালা অনুযায়ী তার ফলাফল প্রকাশ করা হবে।'
চার বছর আগে কোভিড মহামারির পর থেকেই পাবলিক পরীক্ষার সূচি এলোমেলো হয়ে যায়। এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও শুরু হয় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পিছিয়ে।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট বিভাগ ছাড়া বাকি ১০টি শিক্ষা বোর্ডে গত ৩০ জুন থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই।
সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ১৬ জুলাই রাতেই সারাদেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।
পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে ১ আগস্ট পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৪ আগস্ট থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই পরীক্ষাগুলোও স্থগিত হয়ে যায়।
বার বার স্থগিতের পর ১১ আগস্ট থেকে নতুন সূচিতে পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর সহিংসতায় বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র পুড়ে গেলে পরীক্ষা ফের স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
স্থগিত পরীক্ষাগুলো আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেজন্য নতুন সূচিও প্রকাশ করেছিল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু সেগুলো শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে তা বাতিল করে সরকার।