আশা ফখরুলের
দ্রম্নত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেবে সরকার
প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সংস্কার কাজগুলো দ্রম্নত শেষ হবে এমন প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রম্নত সম্ভব সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাবে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কার বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। এর আগে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালনে বিএনপির ঘোষিত দুইদিনের কর্মসূচির প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখেছেন এবং তিনি কিছু সংস্কারের কথা বলেছেন সেখানে সংস্কারে যারা দায়িত্বে তাদের নামও উলেস্নখ করেছেন। তিনি মোটামুটিভাবে তার যে একটা ভিশন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের, সেটা তিনি মোটা দাগে তুলে ধরেছেন। এখানে আমি মনে করি যে, সংস্কারের কথা আমরা সবাই বলেছি, সংস্কার প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক অধিকার একেবারে ধ্বংস করে ফেলেছিল। সে ক্ষেত্রে অতিদ্রম্নত যেন এই সংস্কারের কাজগুলো শেষ করা হয়। মূল যে বিষয়টা রয়েছে গণতন্ত্রের জন্য জনগণের প্রতিনিধিদের শাসন, জনগণের পরিচালনায় তাদের নির্বাচিত সংসদ দিয়ে দেশ চলবে সেই বিষয়টা যেন অবশ্যই খুব দ্রম্নততার সঙ্গে সমাপ্ত হয়- সেটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করি। আমরা মনে করি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছেন। এই কাজ করার জন্য তাদেরকে সময় সুযোগ সবই তাদেরকে দেয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ।
ফখরুল বলেন, 'এই সরকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছে। আমরা আশা করব, তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। একটি কথা স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা যা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। সেজন্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে তৈরি করা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু সেই কাজটাতে জনগনেণ সম্পৃক্ততা থাকতে হবে জনগণ কি চায়, জনগণ কীভাবে জিনিসটা দেখতে চায় সেই বিষয়টা থাকতে হবে। আমরা আশা করব, বর্তমান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে তারা সেটা উপলব্ধি করবেন, যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া আছে তারা দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুরূপে পালন করার চেষ্টা করবেন এবং জনগণ যাতে উপকৃত হয় সেই প্রত্যাশাই আমাদের থাকবে।'
গণতন্ত্র দিবসে সমাবেশের কথা উলেস্নখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, '১৫ সেপ্টেম্বর বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। এই সমাবেশটি হবে ১৪/১৫ বছরে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদেরকে নিয়ে। এই সমাবেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, আবৃত্তি, কবিতা পাঠের ব্যবস্থা থাকবে। এই সমাবেশটি হবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবার সমাবেশ।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই রকম বিপস্নবের পরে এই ধরনের সমস্যা থাকতেই পারে। এটা তো সম্পূর্ণ নতুন সরকার। প্রশাসনে এতদিন ধরে আওয়ামী লীগ যেটা করেছে সম্পূর্ণ রাজনীতিকরণ করতে গিয়ে সব জায়গায় বেশিরভাগ লোকই তাদের মতাবলম্বী লোকদের প্রমোশন দিয়েছে, পদায়ন করেছে, তাদেরকে দিয়ে কাজ করিয়েছে। ফলে এটা একটু সময় লাগবেই। পুরোপুরিভাবে নতুন করে তো এই মুহূর্তে এত অফিসার নতুন করে নিয়োগ করা সম্ভব না। যা আছে তাদেরকে দিয়ে করতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমার বিশ্বাস যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সব কিছু সুষ্ঠু হয়ে যাবে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে ছাত্র-জনতার যে অভু্যত্থান এটাকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য একটা চক্র কাজ করছে। পতিত ফ্যাসিবাদ হাসিনা ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেখান থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এই বাংলাদেশ সম্পর্কে, বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্কে এই অপপ্রচার কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একইসঙ্গে শিল্প ক্ষেত্রে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা সকলকে অনুরোধ করব, এই শিল্প-কল-কারখানাগুলো চালু রাখার ক্ষেত্রে বিএনপির নেতাকর্মীরা যে যেখানে আছি আমরা যেন সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারি।'
স্থায়ী কমিটির অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় চেয়ারপারসনের ?উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।