রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইবু্যনালে দুই অভিযোগ

যাযাদি ডেস্ক
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইবু্যনালে দুই অভিযোগ

কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকার আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা এবং লাশ পোড়ানোর ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে দুটি অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। অন্যদিকে ২০১৩ সালে নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে রেহেনা পারভীন নামে এক আইনজীবীকে মারধর, হত্যা চেষ্টা ও টাকা-স্বর্ণলংকার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে হাসিনাসহ ২৭ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও নড়াইল ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে তার বাবা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপনকেও। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার এসব মামলা হয়।

জানা গেছে, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় নিহতদের দুজনের পরিবারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান বুধবার ট্রাইবু্যনালের তদন্ত সংস্থায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন।

হুজ্জাতুল ইসলাম খান বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২) ও ৪(১)/৪(২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

তিনি জানান, নিহত আস-সাবুরের ভাই মো. রিজওয়ানুল ইসলাম ৩০ জনের বিরুদ্ধে এবং নিহত সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা মোছা. শাহীনা বেগম ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দুটি করেছেন। দুই মামলার অভিযোগ অভিন্ন। দুই স্বজন করেছেন বলেই দুটি মামলা। তবে আসামি কম-বেশি আছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, ১-৭ নম্বর আসামিদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র জনতাদের হত্যা করে তাদের লাশ আগুনে পুড়িয়ে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।

অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সালমান এফ রহমান, চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল মামুন, মো. মারুফ হোসেন, ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুলস্নাহিল কাফি, বেক্সিমকো লিমিটেডের সিকিউরিটি ইনচার্জ মনতাজউদ্দিন মন্ডল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শরীফ ব্যাপারী, কাশিমপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোস্তাক আহমদ, কাশিমপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি সাবের আহমেদ সজীব, ঢাকা-১৯ এর সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম, আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. নাদিম হোসেন।

টাকা-স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়ার

অভিযোগে আরেক মামলা

এদিকে, ২০১৩ সালে নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে রেহেনা পারভীন নামে এক আইনজীবীকে মারধর, হত্যা চেষ্টা ও টাকা-স্বর্ণলংকার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরোবিয়া খানমের আদালতে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-পরিবেশ সম্পাদক ভুক্তভোগী আইনজীবী রেহানা পারভীন বাদী হয়ে এ মামলাটির আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে শাহবাগ থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

মামলার অপর আসামির হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামছুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামছুল হক টুকু, স্থানীয় সরকার পলস্নী-উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস প্রমুখ। এ ছাড়া মামলায় আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী উলেস্নখ করেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের সামনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন তিন শতাধিক আইনজীবী। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ পুলিশের ৪০ থেকে ৫০ জন মাঠ প্রশাসনের পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় বাদী আইনজীবী রেহেনা পারভীনকে বেধড়ক মারধর করা হয়।

বাদী অভিযোগে আরও বলেন, আসামিদের নির্দেশ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগসহ অন্য সংগঠনের নেতাকর্মী একত্রে যৌথ হামলায় বাদীসহ কয়েকজন আইনজীবী মারাত্মকভাবে আহত হন এবং আইনজীবীদের ব্যবহৃত ওয়ালেট, পার্টস, টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বাদী আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মাশরাফি ও তার বাবাসহ

৯০ জনের নামে মামলা

কালিয়া ও নড়াইল প্রতিনিধি জানান, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও নড়াইল ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে তার বাবা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপনকেও। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারাসহ ৯০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৪০০-৫০০ জনকে। মঙ্গলবার রাতে নড়াইল সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শেখ মোস্তফা আল-মুজাহিদুর রহমান পলাশ।

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাজী জহিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অচীন চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক মলয় কুন্ডু, জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গাউছুল আজম মাসুম, সাধারণ সম্পাদক খোকন কুমার সাহাসহ ৯০ জন।

এজাহারে উলেস্নখ করা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট আসামিরাসহ আরও অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে রামদা, ছুরি, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, শটগান, বন্দুক-পিস্তল, হাতবোমাসহ দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বেআইনি জোটবদ্ধ হয়ে নড়াইল চৌরাস্তায় সমাবেশ করে। ওই সময় মালিবাগ হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার অভিভাবকসহ সাধারণ নিরীহ লোকজন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে মিছিল সহকারে শহর অভিমুখে সেতুর পূর্ব পর্যন্ত পৌঁছালে আসামিরা তাদের শটগান দিয়ে গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় বোমা বিস্ফোরণ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে শান্তিকামী আন্দোলনকারীদের ওপর বেপরোয়াভাবে মারপিট ও কুপিয়ে জখম করে। এতে বহু আন্দোলনকারী গুরুতর আহত হন। তাদের অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছেন এবং এখনো চিকিৎসাধীন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আজ বুধবার মামলার কাগজপত্র আদালতে প্রেরণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে