ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্মরণসভা এবং আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের দিন ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ এবং সারাদেশে বিভাগীয় পর্যায়ে শোভাযাত্রা করবে বিএনপি। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ হতে পারে।
বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের এক যৌথসভা শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিকে কর্মসূচি পালনে সারাদেশে নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে- সারাদেশে বিভাগীয় সদরে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রায় জেলা, মহানগর ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী নিজ ব্যানার নিয়ে অংশগ্রহণ করবে। ওই কর্মসূচিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নেতৃত্ব দেবেন। গণ-অভু্যত্থানে নিহত শহীদদের পস্ন্যাকার্ড ছাড়া কোনো নেতাকর্মীর পস্ন্যাকার্ড বহন করা যাবে না। নেতাকর্মী জাতীয় ও দলীয় পতাকা বহন করবেন। শোভাযাত্রার সামনে কিংবা পেছনে কোনো মোটরসাইকেল বহর থাকবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা গুরুতর আহত হয়েছেন তারা শোভাযাত্রার সামনে থাকবেন। সেক্ষেত্রে আহতদের জন্য হুইল চেয়ার কিংবা অন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণ বিএনপির তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষকদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারের বৈঠক
বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন। বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনের জন্য কত সময় লাগতে পারে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়েও আলোচনা হয় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বুধবার দলের চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে ডেপুটি হেড অব মিশন ক্লিনটন পোবকে ও প্রথম সচিব লারা অ্যাডামস উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কবে নির্বাচন হবে, নির্বাচনের জন্য কত সময় লাগতে পারে- তা জানতে চেয়েছে। নির্বাচনের আয়োজনের জন্য কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মূলত সার্বিকভাবে আলোচনা শেষে যত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে- সেটা নিয়েও আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের কথা বলেছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা তো যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছি। যৌক্তিক সময়ের পরিধি যারা স্টেকহোল্ডার আছে তারা বিবেচনা করবে। আমরা একটা সময় বেঁধে দিয়ে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা চাই সরকার সফলভাবে তাদের কাজগুলো করুক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করুক। আমরা নিশ্চিত তারা সে কাজটি দ্রম্নত করবে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি।
মির্জা ফখরুলের বিবৃতি
দুষ্কৃতকারীরা আবারও দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর ওপর হামলা করে গুরুতর আহত করার প্রতিবাদে বিএনপি মহাসচিব এ বিবৃতি দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আবু আল ইউসুফ খান টিপুর ওপর দুষ্কৃতকারীদের বর্বরোচিত হামলা এবং তাকে গুরুতর আহত করার ঘটনা দুষ্কৃতকারীদের অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ। এসব সন্ত্রাসীকে কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দল-মত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
টিপুর ওপর হামলাকারী দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানান এবং তার আশু সুস্থতা কামনা করেন মির্জা ফখরুল।