কুমিলস্নায় আসিফ মাহমুদ
মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে চায়
প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না
যুব ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে চায়, বিলাসিতা চায় না। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সঙ্গে আমাদের কথা হবে চোখে চোখ রেখে, মাথা নিচু করে নয়। কথা হবে মাথা উঁচু করে। কথা বলতে হবে সমুন্নত সম্মান দিয়ে। ভারত এতদিন একটি দলের সরকারের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু এখন আর তা হবে না, এখন কথা বলতে হবে এদেশের জনগণের সঙ্গে। জনগণ পররাষ্ট্রের নীতির ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করবে। সুতরাং, জনগণের বুকে গুলি চালিয়ে জনগণকে হত্যা করে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলার যে প্র্যাকটিস তারা এতদিন ধরে করে এসেছে, সেখান থেকে সরে আসতে হবে। তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুমিলস্না টাউন হল মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে জুলাই অভু্যত্থানের শহীদদের স্পিরিটকে ধারণ করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সমন্বয়কদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন- আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, সুমাইয়া আক্তার, হামযা মাহবুব, জিয়া উদ্দিন আয়ান, আলী আহমেদ আরাফ, আবু রায়হান, তাছনিয়া নাওরিন, মহিদুল ইসলাম রিন্তু, ফারিয়া রহমান, খালেদ হাসান, নাঈম আবেদিন প্রমুখ।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, শুধু ১৬ বছর নয়, গত ৫৩ বছর ধরে দেশের ওপর যে জঞ্জাল জমা হয়েছে, এখন আমরা সেগুলো সরানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ৫৩ বছরের জঞ্জাল একদিনে বা এক মাসে কীভাবে সমাধান করা যায়, তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু ইতোমধ্যে আমরা কিছু পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি। আজ আমরা এতটুকু স্বস্তিতে অন্তত আছি, এখন আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। আজ কেউ আমাদের বিরক্ত করছে না।র্ যাব, পুলিশ ও ডিবি বলে আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে না। তিনি আরও বলেন, বিগত ৫৩ বছরে এমন কোনো বন্যা দেখাতে পারবেন না, যেখানে ত্রাণ চুরির ঘটনা ঘটেনি। এবার কিন্তু এ রকম একটা ঘটনাও ঘটেনি। চাল চুরি করে, ত্রাণ চুরি করে, খাটে লুকিয়ে রাখার ঘটনা একটাও ঘটেনি। প্রবাসী ভাইয়েরা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন, এয়ারপোর্টে তাদের কীভাবে লাঞ্ছিত করা হতো, তাদের লাগেজ আটকে রেখে তাদের কীভাবে কষ্ট দেওয়া হতো, এখন আর সেটা নেই। আসিফ আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন বিআরটিএ-সহ সরকারি অফিসগুলো জনগণকে ঘুরাতো, কষ্ট দিত, ঘুরিয়ে তাদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করত। এখন আর কেউ কি সেই সাহস দেখাচ্ছে? সেটি যেন আর কেউ ভবিষ্যতেও সাহস না দেখায়, আমরা সেই সংস্কারে কথা বলছি। সেই কাঠামোগত সংস্কার কীভাবে হবে, তা আমরা ২১ জন যারা সরকারে বসেছি, সেটি আমরা ঠিক করব না, সেটি নির্ধারণ করবে এদেশের জনগণ। শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনই নয়; অন্যান্য সংগঠন যারা আছে, সাধারণ মানুষ যারা আছে- সবার কথা আমরা শুনব। আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণ হবে জনগণের প্রণীত রূপরেখায়। আমরা সেটি নিশ্চিত করতে চাই। আপনারা যে রূপরেখা দেবেন, আমরা ক্যাবিনেটে বসে সেসব রূপরেখা শুধু বাস্তবায়ন করে যাব। বর্তমান ছাত্রসমাজ রাজনীতি করবে কিনা, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনীতি করা কিংবা না করা এটা সবারই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং অধিকারের প্রশ্ন। কিন্তু রাজনৈতিক সচেতনতা সবার মধ্যে থাকতে হবে। এটা না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদের শাসিত হয়েছি। আমরা অতীতে ৫ আগস্টের মতো একবারও এক হতে পারিনি। আমরা যখনই এক হতে চেষ্টা করেছি বিভিন্ন ইসু্য দিয়ে বিভিন্নভাবে আলাদা করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ইসু্যতে আমাদের মামলা-হামলা করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এখন যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, সেটি আপনারা ধরে রাখবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাদের যে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, মানুষের ওপর যে অন্যায়-অবিচার তারা করেছে, এর একটি চূড়ান্ত ফসল। আপনারাও যদি একই পথে হাঁটেন তাহলে আপনাদের পরিণতিও সেই আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই হবে।
তিনি বলেন, খুব দ্রম্নত সময়ের মধ্যে শহীদের তালিকা করা হচ্ছে। অনেককেই বেওয়ারিশভাবে দাফন করা হয়েছে। কবর দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্টের পর অনেক প্রমাণ লোপাট করা হয়েছিল, তা আমাদের খুঁজে পেতে একটু সময় লাগছে। পরে তিনি কুমিলস্না সার্কিট হাউসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।