অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বেড়েছে

ঢাকায় থানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিকে নানা উদ্যোগ

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

গাফফার খান চৌধুরী
অনেক চেষ্টার পরও স্বাভাবিক হয়নি পুলিশের কার্যক্রম। যদিও পুলিশি কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে জোরালো চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে ঢাকার থানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে চলছে নানামুখী তৎপরতা। থানাগুলোয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। থানাগুলোয় স্বল্পপরিসরে পুলিশের কার্যক্রম চলছে। তবে তা থানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আসামি গ্রেপ্তার, দিনে বা রাতে অভিযান পরিচালনা করা, চেকপোস্ট স্থাপন করে তলস্নাশি কার্যক্রম চালানো ও রাত্রীকালীন টহল অনেকটা বন্ধ রয়েছে। সোমবার দুপুরে সরেজমিন ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, একটি গাড়িতে করে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে তিনটি বস্তা নামান। বস্তাগুলো নামানোর সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বেশ সতর্ক অবস্থায় রাইফেল হাতে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। বলতে গেলে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই বস্তা তিনটি একেবারে থানার ভেতরের গেটে নিয়ে নামানো হয়। সেখান থেকে পুলিশ সদস্যরা মিলে সেগুলো নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান। পস্নাস্টিকের বস্তায় ভরে মালামালগুলো নেওয়া হয়। বস্তার ফাঁক দিয়ে বেশকিছু সিলভার কালারের সেল দেখা গেল। সেগুলো টিয়ারশেল বলে মনে হয়েছে। তা মোটা স্বচ্ছ পলিথিনে মোড়ানো। বস্তার কিছু অংশ ফেটে যাওয়ার কারণে সেগুলো বাহির থেকে দেখা যাচ্ছিল। সেগুলো থানা পর্যন্ত পৌঁছাতে যে গাড়িটি ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি পুলিশের। তবে গাড়িটি যথেষ্ট নিরাপদ বলে মনে হয়নি। মাত্র কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে সেগুলো বহন করে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান যায়যায়দিনকে বলেন, থানার কার্যক্রম আরও জোরালো করার জন্যই অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেওয়া হয়েছে। যাতে পুলিশের কার্যক্রম সচল থাকে। তারই অংশ হিসেবে বরাদ্দ হওয়া বেশকিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ সোমবার থানায় এসেছে। মূলত আপৎকালীন মুহূর্ত মোকাবিলা বা পুলিশি কার্যক্রম জোরালো করতেই এমন তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে বেশকিছু পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। ওইসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া থানা থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে অনেকগুলো চলমান যৌথবাহিনীর অভিযান উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে যেগুলো মোহাম্মদপুর থানার নামে বরাদ্দ ছিল, সেগুলো থানায় রাখা হচ্ছে। বাকিগুলো পুলিশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। হস্তাস্তর করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ যাদের, তাদের কাছে ফেরত দেবে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, থানায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার কাজে আরও নিরাপদ যানবাহন ব্যবহৃত হওয়া উচিত। অন্যথায় বিপদ ঘটতে পারে। যদিও এমন আশঙ্কা থেকেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানাগুলোয় দিনের বেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। রাতে কোনোভাবেই থানার জন্য বরাদ্দকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানো হচ্ছে না। মূলত নিরাপত্তাজনিত কারণেই এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের কার্যক্রম থানার মধ্যেই আপাতত সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিশেষ করে মামলা, অভিযোগ ও সাধারণ ডায়রি দায়েরের কার্যক্রম চলমান আছে। এর বাইরে দিনের বেলায় যৎসামান্য টহল কার্যক্রম চালাচ্ছে থানাগুলো। তবে রাতে টহল কার্যক্রম শুধু থানা ও তার আশপাশেই সীমাবদ্ধ থাকছে। পর্যাপ্ত ফোর্স ও অস্ত্র এবং গোলাবারুদের অভাবে রাতে চেকপোস্ট স্থাপন করে তলস্নাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এমনকি থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। একইভাবে আদালতে দায়েরকৃত মামলা বিচারকের আদেশমতো থানা গ্রহণ করছে। তবে আদালত থেকে প্রেরিতে ওয়ারেন্ট অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করার কাজটি যথাযথভাবে পালন করতে পারছে পুলিশ। মূলত পুলিশি কার্যক্রম শতভাগ সচল না হওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে দ্রম্নত এমন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সরেজমিন বিভিন্ন থানা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক থানায় পুলিশি কার্যক্রম চালানোর মতো পরিবেশ নেই। কোনো কোনো থানায় পুলিশ সদস্যদের অতীব জরুরি প্রাকৃতিক কাজ সারার মতো পরিবেশও সৃষ্টি হয়নি। অনেক থানার হাজতখানা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে নাশকতাকারীরা ভেঙে ফেলেছে। সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে। অস্ত্রাগার লুট হয়েছে। সেসব অস্ত্রাগার মেরামতের কাজও চলছে জোরেশোরে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামি গ্রেপ্তার করলেও সেই আসামিকে রাখার মতো হাজতখানা নেই ঢাকার অধিকাংশ থানায়। যে কারণে পুলিশ আর ঝুঁকি নিতে পারছে না। বিভিন্ন থানায় নতুন করে প্রাচীর দেওয়াল তোলা হচ্ছে। নতুন করে লাগানো হচ্ছে লোহার গ্রিলের বেড়া। থানার প্রবেশমুখে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী বা সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণের কাজও চলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বাথরুমসহ প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস নতুন করে তৈরি ও মেরামত করার কাজ চলছে। ঢাকার থানাগুলোর কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে যথেষ্ট সময় লাগবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মাইনুল হাসান জানিয়েছেন, ঢাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানাভাবে থানাগুলোর কার্যক্রম দ্রম্নত স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পতনের পর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সুযোগে নাশকতাকারীরা দেশের অধিকাংশ থানায় হামলা, ভাঙচুর, অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে। একই সঙ্গে অনেক থানা জ্বালিয়ে দেয়। এতে করে থানায় থাকা সব নথিপত্র পুড়ে যায়। পরিকল্পিতভাবে পুলিশের প্রায় সব যানবাহন ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে ঢাকার থানাগুলোয়। সারাদেশের থানাগুলো থেকে বহু অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়। লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত ৩ সেপ্টেম্বর। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে যৌথবাহিনী লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারসহ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য মোতাবেক, সারাদেশ থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৮১৮টি। গত ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিন গান), এলএমজি (লাইট মেশিন গান) ও পিস্তলসহ দেড় হাজারের বেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এখনো উদ্ধার হয়নি প্রায় ৩ লাখ গোলাবারুদ। এ ছাড়া অনেক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়নি। লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়াও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।