রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য

দুজনকে ইবি ক্যাম্পাস ছাড়া করল ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

ইবি প্রতিনিধি
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দুজনকে ইবি ক্যাম্পাস ছাড়া করল ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলে শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের জেরে দুজনকে মারধর ও ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার মধ্যরাতে হলের টিভি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আহসানুলস্নাহ অলি এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নাফিজ ইকবাল। পূর্বে তারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়, রোববার সকালে হলের গণরুম বাতিল ঘোষণা ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় হয় হল প্রশাসন। এ নিয়ে অনাবাসিক ও আগে গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে টিভি কক্ষে মিটিং ডাকে আহসানুলস্নাহ অলি। সেখানে বিভিন্ন জন তাদের মত প্রকাশ করে। তবে অলি তার বক্তব্যে আন্দোলনকারী ও সমন্বয়কদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর নানা মন্তব্য করেন। এতে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হলে হট্টগোল ও বাগবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে অলিকে মারধর করে ধাওয়া দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে সে দৌড়ে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যায়। পরে তার বিভাগের জুনিয়র নাফিজ অলির পক্ষ নিলে শিক্ষার্থীরা তাকেও ধাওয়া দেয় এবং সেও ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যায়। পরে সমন্বয়ক প্যানেলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে কথা বলে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।

হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা হলের মধ্যে গ্রম্নপিং করে আন্দোলনকে বিতর্কিত করা ও নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছিল। এ ছাড়া পূর্বে তারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।

এ বিষয়ে আহসানুলস্নাহ অলি বলেন, 'লালন শাহ হলের বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আবাসনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হলের টিভি রুমে আলোচনা হচ্ছিল। এ সময় আমি আমার বক্তব্যে বলি, বর্তমানে আন্দোলনকারীরা ছাত্রদের ফেসবুক পোস্টের ওপর ভিত্তি করে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে হল থেকে নামিয়ে দেয়। অথচ আন্দোলনকারী হাসানুল বান্না নামে একজনও ফেসবুক গ্রম্নপে বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী সরকারকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ জুলাই বন্ধ হওয়ার পর আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে এবং আমার বিভাগের শিক্ষক মতিন স্যাররা ২ আগস্টের পর থেকে একাত্মতা প্রকাশ করলে আবার আন্দোলন বেগবান হয় বলে মন্তব্য করি। তবে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা আমার বক্তব্য ভুল বুঝে আমার ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে আমাকে মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এদিকে আরেক শিক্ষার্থী নাফিজ ইকবাল বলেন, 'আমার বিভাগের বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটার পর আমি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। এসময় তারা আমার ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে আমাকেও ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়।'

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, 'অলি নামে একজন যে আগে ছাত্রলীগ কর্মী ছিল, সে শিক্ষার্থীদের সামনে আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে। ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সে হল ছেড়ে পালিয়ে যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'আন্দোলন পরবর্তী প্রশাসন শূন্য ক্যাম্পাসকে আমরা শান্তিপূর্ণ রাখতে চেষ্টা করছি। কিন্তু একটি গ্রম্নপ ছাত্রলীগের 'বি' টিম হয়ে প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা এগুলোকে কোনোভাবেই বরদাস্ত করব না। বিশেষ করে আন্দোলন ও আন্দোলনের ফলকে কেউ বিতর্কিত করার চেষ্টা করলে এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।'

লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, 'রাতে ছাত্রদের মধ্যে একটি ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। এটি নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে