রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মির্জা ফখরুল

ভারত পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে প্রভুত্বের রাজনীতি করছে

যাযাদি রিপোর্ট
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সোমবার জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মোনাজাত করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মী -ফোকাস বাংলা

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক খুব ভালো যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ- ভারত সবসময়ই প্রভুত্বের একটা রাজনীতি এই দেশগুলোর সঙ্গে করছে, যেটা ভারতের জন্য শুভ বয়ে আনবে না, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জন্যও শুভ হবে না। সোমবার জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে, মর্যাদার ভিত্তিতে, পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে এই (ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশীর) সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। তিনি বলেন, 'দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের হাত থেকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ মুক্ত হয়েছে। এই বিপস্নবে দেশের অসংখ্য ছাত্র-জনতা, এমনকি নারী ও শিশু প্রাণ দিয়েছেন। এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নারীদের যে অবদান, সেটাকে আমরা কখনোই অস্বীকার করতে পারব না।' তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, দেশে খুব শিগগিরই আজকে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যারা জনগণের রায় ও মতামতের ওপর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে যত দ্রম্নত সম্ভব সংস্কারগুলোকে সম্পন্ন করে দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।' এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা বারবার বলেছি, দুইবার দেখা করেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। প্রতিবারই বলেছি, যে সংস্কারগুলো করতে চান সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরুন এবং সেটার সময় নির্ধারণ করুন। যাতে করে সুনির্দিষ্ট একটা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে। সেজন্য আমরা তাকে অনুরোধ করেছি।' এ সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ও ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন, মহিলা দলের কয়েকশ' নেতাকর্মী ছিলেন। জনদুর্ভোগে এড়াতে একগুচ্ছ নির্দেশনা এদিকে, জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকে তাদের সাংগঠনিক সফরকালে মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা পরিহার এবং সারাদেশে রঙিন ব্যানার-ফেস্টুন-পস্ন্যাকার্ড প্রদর্শনের ওপরে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর। চিঠিতে বলা হয়েছে, এত দ্বারা বিএনপি এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাসহ সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, আপনাদের অধীনস্থ কোনো ইউনিটে সাংগঠনিক কাজের উদ্দেশ্যে সফরকালে কোনো ধরনের মোটর সাইকেল বহর, কারসহ অন্য কোনো যানবাহনে শোভাযাত্রা পরিহার করতে হবে। এসব শোভাযাত্রার কারণে পাশ দিয়ে চলাচলরত সাধারণ মানুষের যানবাহন বা পথচারীদের যাতায়াতে ভয়ানক বিঘ্ন ঘটে। যে এলাকায় সাংগঠনিক সভা, কর্মিসভা অথবা জনসভা অনুষ্ঠিত হয় সেই এলাকায় ঊর্ধ্বতন নেতাদের আগমন ঘটলে শোভাযাত্রার কারণে প্রচন্ড যানজটের সৃষ্টি হয় এবং মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। চিঠিতে আরও উলেস্নখ করে বলা হয়, যেহেতু বিএনপি গণসম্পৃক্ত একটি রাজনৈতিক দল, সেহেতু জনগণকে দুর্ভোগের মধ্যে না ফেলে মোটর সাইকেল বহর বা অন্য কোনো যানবাহনের শোভাযাত্রা পরিহার করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। চিঠিতে বলা হয়েছে, ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রং-বেরঙের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন করতে। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু, অনভিপ্রেত এবং দলের শৃঙ্খলাপরিপন্থি। দলের অতি উৎসাহী কতিপয় নেতা নিজেদের ছবি সংবলিত পোস্টার প্রকাশ করছেন এবং ফেস্টুন ও ব্যানার ঝুলিয়ে রাখছেন। এহেন পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন করা থেকে নেতাকর্মীদের বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। ঐক্য সুসংহত করতে বৈঠক এদিকে, নিজেদের মধ্যে গড়ে ওঠা ঐক্য সুসংহত করতে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ আরও দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সোমবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পর্যায়ক্রমে এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বৈঠকটি হয় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সঙ্গে, যার নেতৃত্ব দেন জোটের সমন্বয়ক হারুন আল রশিদ খান। এরপর মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ এবং সবশেষে ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে ন্যাশনাল ?মুভমেন্ট ডেমোক্রেটিক- এনডিএম-এর সঙ্গে বৈঠক হয়। এই তিনটি বৈঠকে আমীর খসরুর সঙ্গে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উলস্নাহ বুলু। বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, 'আজকে আমরা যাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি তারা আমাদের আন্দোলনের সাথী, আমাদের সবার অনেক সেক্রিফাইস আছে, আমরা জেলে গিয়েছি, আমরা নির্যাতিত হয়েছি সবাই। আমরা সেই সস্পর্কের ধারা অব্যাহত রেখেছি। দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা আবার নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। এই আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশের যে স্বপ্ন তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। শেখ হাসিনা পালায়ন করার পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে যে নতুন ভাবনা, যে নতুন আকাঙ্ক্ষা, যে নতুন প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে আমরা যুগপৎ আন্দোলনের থাকা দলগুলো আগামীর নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে কী করব তা নিয়ে আলোচনা করেছি।' তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু এখন একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে তার প্রতি জনগণের আস্থা আছে, আমাদেরও আস্থা ও সমর্থন আছে। আমরা আশাবাদী যে, এই সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সামর্থ্য হবে।' প্রসঙ্গত, গত ৬ সেপ্টেম্বর গণফোরাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি ও ন্যাপ ভাসানীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে