চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড
এসএন করপোরেশনে ১৫ বছরে ১৩ দুর্ঘটনা, মৃতু্য ১২ জনের
জাহাজ কাটার সময় বিস্ফোরণে দগ্ধ আরও একজনের প্রাণহানি
প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বু্যরো
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের এসএন করপোরেশন নামের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় বিস্ফোরণে দগ্ধ খায়রুল ইসলাম (২১) নামে আরও একজনের মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতু্যর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ জনে। ঘটনার পর শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এস এন করপোরেশনের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে এসএন করপোরেশন (ইউনিট-২) ও এমটি স্বরাজ্য স্ক্র্যাপ জাহাজের পরিবেশ ছাড়পত্র স্থগিত করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসএন করপোরেশনেই গত ১৫ বছরে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১২ জনের মৃতু্য হয়েছে। আহত হয়েছেন ২৫ জন।
সোমবার ভোরে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় খায়রুল ইসলামের মৃতু্য হয়। মারা যাওয়া খাইরুল ইসলাম পিরোজপুরের কাউখালী থানার দাশের কাঁথি গ্রামের কামাল শেখের ছেলে। খায়রুল ইসলাম এস এন করপোরেশনে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এর আগে রোববার ভোরে ঢাকার একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহমেদ উলস্নাহ (৩৮) নামে আরও একজন মারা যান।
খায়রুল ইসলামের মৃতু্যর বিষয়টি নিশ্চিত করেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, দগ্ধ হওয়া ১২ জনের মধ্যে ৮ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৭ সেপ্টেম্বর বিকালে হস্তান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে একজন মারা গেছেন। রোববারও একজন মারা গেছেন। ঢাকায় চিকিৎসাধীন ৮ জনের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। বর্তমানে ঢাকায় ৬ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
খায়রুল ইসলামের চাচাতো ভাই রাহাত জানান, খাইরুল পুরাতন জাহাজ ভাঙার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। তার শরীরে ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
এদিকে শুধু এসএন করপোরেশনেই গত ১৫ বছরে ১৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১২ জনের মৃতু্য হয়েছে এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন। জানা গেছে, এর আগেও প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্ঘটনার পর কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক পার পেয়ে যায়। তবে বিস্ফোরণের ঘটনার পর শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এসএন করপোরেশনের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার অ্যান্ড রিসাইকেলিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) সদস্য সচিব নাজমুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয় এস এন কর্পোরেশন (ইউনিট-২) ও এমটি স্বরাজ্য স্ক্র্যাপ জাহাজের পরিবেশ ছাড়পত্র স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যে জাহাজটি ভাঙার সময় বিস্ফোরণ হয়, সেটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করতেও নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা, যা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তর তুলে ধরেছে। এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কেন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে না, সে বিষয়ে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এ দুর্ঘটনার ফলে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের পরিবেশগত ছাড়পত্রের কয়েকটি শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। একইভাবে স্ক্র্যাপ জাহাজের ছাড়পত্রের শর্তাবলিও ভঙ্গ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মেসার্স এসএন করপোরেশন (ইউনিট-২) ও এমটি স্বরাজ্য স্ক্র্যাপ জাহাজের পরিবেশগত ছাড়পত্র স্থগিত করা হয়েছে এবং শিপ ব্রেকিং কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে।
বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা তদন্তে আট সদস্যের কমিটি করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
উলেস্নখ্য, গত শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর তেঁতুলতলা এলাকার সাগর উপকূলে অবস্থিত শওকত আলী চৌধুরী মালিকানাধীন এসএন করপোরেশন নামের জাহাজভাঙা কারখানার পাম্প রুমের ভেতরে কাটিংয়ের কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। এমন সময় হঠাৎ সেখানে থাকা একটি ট্যাংকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে আগুন ধরে যাওয়ার পাশাপাশি কেঁপে ওঠে কারখানার আশপাশ। এ সময় পাম্প রুমের ভেতরে কাজ করা ১২ শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। এরপর তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে আহমেদ উলস্নাহ (৩৯) মৃতু্য হয় এবং সোমবার ভোরে খাইরুল ইসলামের মৃতু্য হয়।
এ ঘটনায় চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাকি চারজন হলেন- সাগর (২০), রফিকুল ইসলাম (৩০), মো. রফিক (৩০), সাইফুল (৩০)।