দক্ষিণ চট্টগ্রামে বাস চলাচল বন্ধ বিপাকে যাত্রীরা
প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বু্যরো
চাঁদাবাজির প্রতিবাদ ও চালককে মারধরের অভিযোগে পূর্বঘোষণা ছাড়াই চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকদের একটি অংশ। ফলে রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রামমুখী কোনো বাস ছেড়ে আসেনি এবং চট্টগ্রাম অভিমুখী সড়কে কোনো বাস ছেড়েও যায়নি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে শত শত যাত্রী। এছাড়া বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প যানবাহন হিসেবে যাত্রীরা বেছে নেয় মোটর সাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। আর যাত্রীদের গুনতে হয় তিনগুণেরও বেশি ভাড়া।
সরেজমিন দেখা যায়, শ্রমিক আন্দোলনের কারণে সেতুর ওপর বহু গাড়ি আটকে ছিল। ভয়াবহ যানজট তৈরি হয় সেতুর দুই প্রান্তে। কয়েকশ' শ্রমিক সেতুর উত্তর প্রান্তে চাক্তাই এলাকায় জড়ো হয়ে সেস্নাগান দেয়। তাদের বিক্ষোভের কারণে গাড়ি না চলায় সকাল থেকেই রোদে পুড়ে অনেক যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিল। কিছু ছোট গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেলেও সেসব গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। বাস বন্ধ থাকলেও সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভাড়া করা মোটর সাইকেল চলাচল করে। এতে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজিচালিত অটোরিকশা দোহাজারী, আমিরাবাদ ও কেরানিহাট পর্যন্ত জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত নেয়। অনেকে বাধ্য হয়েই বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্য যেতে রাজি হয়। এছাড়া শাহ আমানত সেতু এলাকায় বান্দরবান ও কক্সবাজারগামী বাসগুলো সড়কের পাশে অলস পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
শ্রমিকদের দাবি, অতিরিক্ত চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় পরিবহণ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মুসা অবৈধ শ্রমিক লেলিয়ে প্রকৃত শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে। তাদের এক সিনিয়র ড্রাইভার ভাইকে মেরেছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছেন শ্রমিকরা।
নজরুল ইসলাম নামে এক পরিবহণ শ্রমিক বলেন, শনিবার রাতে ঈগল পরিবহণের এক চালককে অন্যায়ভাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দোহাজারী কসাইপাড়া এলাকায় মারধর করে আহত করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিতে যান চলাচল বন্ধ করে আমরা প্রতিবাদ করি।
আরাকান সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত বৈষম্যবিরোধী পরিবহণ শ্রমিক আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক অভিযোগ করেন, নির্বাচন ছাড়াই গত ১৭ বছর আমাদের রক্ত চুষে খেয়েছেন মুসা। এখন দেশের পটপরিবর্তন হলেও থামেনি মুসার চাঁদাবাজি। মুসা ও তার বাহিনীর নির্যাতনে গত ১৭ বছরে প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক এই পেশা ছেড়ে চলে গেছেন। স্বৈরাচার মুসার শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
বাসচালক মো. আলী আজগর অভিযোগ করে বলেন, চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় আমাকে মারধর করা হয়েছে। আরাকান সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুছাসহ পুরো কমিটিকে চাঁদাবাজির জন্য দায়ী।
অবশ্য চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি শ্রমিকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি।
এদিকে ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনসাধারণ। আগের দিন ধর্মঘটের কোনো ঘোষণা না পাওয়ায় যে যার যার গন্তব্যের বের হয়েছেন। কিন্তু নগরের বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ এলাকায় গিয়ে লোকজন জানতে পারে ধর্মঘটের কথা। এ কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। কেউ হেঁটে, কেউ বা তিন চাকার বাহনে চড়ে ছুটে গন্তব্যে। গুনেছে বাড়তি ভাড়াও।
চন্দনাইশের উদ্দেশে বের হওয়া মইনুল হাসান যায়যায়দিনকে বলেন, আমি বেলা ১১টার দিকে নতুন ব্রিজ এলাকায় গিয়ে জানতে পারি বাস চলাচল করছে না। গত শনিবার রাতেও এ ধরনের কোনো ঘোষণা ছিল না। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এভাবে আন্দোলন করা যুক্তিসঙ্গত না। এছাড়া নতুন ব্রিজ থেকে চন্দনাইশ যেতে যেখানে দুইশত টাকা খরচ হয় ওখানে আমার ৬০০ টাকা দিয়ে যেতে হয়।
সাইফুল নামে আরেক যাত্রী বলেন, নিয়মিত নতুন ব্রিজ থেকে বাসে করে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে কেরানিহাট যাই। কিন্তু গাড়ি বন্ধ থাকার সুযোগে মোটর সাইকেল জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং সিএনজি জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা চাই।