দেশের চার জেলায় পৃথক চারটি সড়ক দুর্ঘটনায় পিতা-পুত্র ও জামাই-শ্বশুরসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। জেলাগুলোর মধ্যে কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে পিতা-পুত্রসহ চারজন, গাইবান্ধায় মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় জামাই-শ্বশুর, ঝিনাইদহের শৈলকূপায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটর সাইকেল চালক, ডুমুরিয়ার কাঁঠালতলায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় এক নারী ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ট্রাক চালকের সহকারী নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
স্টাফ রিপোর্টার ও চৌদ্দগ্রাম (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে শিশুসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হচ্ছেন ফেনী সদরের মোটবী ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষ্ণীপুর গ্রামের মামুন (৫০), তার শাশুড়ি মাজেদা বেগম (৭০), ছেলে সাইমান (৫ মাস) ও মাইক্রোবাসের চালক ফেনী সদরের মাস্টারপাড়ার হাসান হাজারির ছেলে আলাউদ্দিন হাজারি (২৭)। উপজেলার নানকরা এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওসি রইস উদ্দিন।
নিহত মামুনের ভাই হানিফ জানান, তার ভাই বন্যাকবলিত নিজের বাড়ির লোকজনদের দেখতে দু'দিন আগে ফেনীতে আসেন। মামুন ঢাকা একটি হাসপাতালে চাকরি করেন। তিনি সকালে স্ত্রী-সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে ফেনী থেকে রওয়ানা হন। কিছুক্ষণ পরে তিনি শোনেন তাদের গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মহাসড়কের নানকরা এলাকায় শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে ঢাকামুখী লেনে একটি মাইক্রোবাসকে (ঢাকা মেট্টো চ-১৩-৩৬৬২) পিছন থেকে দ্রম্নতগতির স্টার লাইন পরিবহণের যাত্রীবাহী একটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসটি মহাসড়ক থেকে নিচে ছিটকে পড়ে চালক ও শিশুসহ চারজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। এ সময় মাইক্রোবাসে থাকা নিহত মামুনের স্ত্রীসহ আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
খবর পেয়ে মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দু'টি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, এদিন সকাল ৭টার দিকে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের হরিপাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাক চালকের সহকারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ট্রাকচালক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহত সৌরভের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে। ওই গ্রামের শরিপদ পাহানের ছেলে তিনি। আহত ট্রাকচালক নওগাঁ সদর উপজেলার রজতপুর গ্রামের আব্দুল গাজীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৪৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার হরিপাড়াবাজারে দিনাজপুরগামী একটি সার বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। একই সময় দিনাজপুর গামী অন্য একটি কাঠ বোঝাই ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট ২৪৮২৯২) পিছন থেকে দাঁড়িয়ে থাকা সার বোঝাই ট্রাককে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই সৌরভ মারা যান।
ঘোড়াঘাট থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'নিহতের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। মরদেহ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।'
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, এদিন দুপুরে জেলার শৈলকুপায় ট্রাকের ধাক্কায় পিয়াস মোলস্না (২৪) নামের এক মোটর সাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। উপজেলার দুধসর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনের সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সেসময় আহত হন মোটর সাইকেলের অন্য যাত্রী পার্থ কুমার। নিহত পিয়াস উপজেলার আউশিয়া গ্রামের জাকির মোলস্নার ছেলে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাক্তার ফারজানা ইয়াসমিন জানান, হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় পিয়াসের মৃতু্য হয়। ধারণা করা হচ্ছে তার মাথা, মুখে আঘাত এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃতু্য হয়েছে। আহত পার্থ কুমারের অবস্থাও আশংকাজনক।
ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, এদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ডুমুরিয়ার কাঁঠালতলা মঠ মন্দিরের সামনে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় বর্ণা দাস নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ সময় পারভীন বেগম নামে আরও এক মর্নিং ওয়ার্কার গুরুতর আহত হন।
জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের সেবা দাসের সহধর্মিণী বর্ণা রানী দাস (৫০) প্রতিদিনের মতো খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে মর্নিং ওয়ার্কে বের হন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাঁঠালতলা মন্দিরের সামনে সাতক্ষীরাগামী একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে (ঢাকা মেট্রো-ছ-৭১-০০০৮) তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে খর্ণিয়া হাইওয়ে পুলিশ পরিদর্শক ফজলুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে পাঠাই। অ্যাম্বুলেন্সটি পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের বকচর নামক স্থানে মোটর সাইকেল উল্টে আরোহী শ্বশুর-জামাই নিহত হয়েছেন। উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের বকচর ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন উপজেলার গোবিন্দনগর গ্রামের রমজান আলীর পুত্র জাহিদুল ইসলাম (৪০) এবং তার জামাই কোমরপুর গ্রামের শহিদুল মন্ডলের পুত্র শামীম মন্ডল (২৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে মোটর সাইকেলটি বগুড়া থেকে দ্রম্নতগতিতে গোবিন্দগঞ্জের দিকে আসার সময় বকচর নামক স্থানে চালক মহাসড়কের লেন পরিবর্তনের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দু'জনেই মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহতদের উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দু'জনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি শরিফুল ইসলাম জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ দু'টি হস্তান্তর করা হয়েছে।