জামায়াতের আমির

জুলাইয়ের গণহত্যাকারীদের ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাজধানীর মগবাজারে বৃহস্পতিবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান -সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার সরকার 'সুস্পষ্ট গণহত্যা' চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, এ গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই। রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সকালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে শফিকুর রহমান এ কথা বলেন। এর আগে গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির দেশে 'হিংসার ও প্রতিশোধের রাজনীতির' অবসান চেয়ে বলেছিলেন, 'দল হিসেবে আমাদের ওপর যা করা হয়েছে, আমরা আলস্নাহর ওয়াস্তে ক্ষমা করে দিলাম।' মজলিসে শুরার সভায় ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াতের আমির বিগত আন্দোলনের উলেস্নখ করে বলেন, 'এই গণহত্যা ক্ষমা করার কারও অধিকার নেই। দল হিসেবে সাড়ে ১৫ বছর আমাদের সঙ্গে যে বৈরিতা করা হয়েছে, আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অফিসগুলোতে তালা ঝোলানো হয়েছে, আমাদের স্বস্তির সঙ্গে চলতে দেওয়া হয়নি, দফায় দফায় আমাদের নির্যাতন করা হয়েছে বিভিন্নভাবে। শেষ পর্যন্ত দিশাহারা সরকার শেষ মুহূর্তে আমাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাদের কলিজা ঠান্ডা করেছে। আমরা বলেছি প্রতিশোধ নেব না।' শফিকুর রহমান বলেন, 'প্রতিশোধ না নেওয়ার মানে হচ্ছে আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অপরাধ যিনি করেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলাও হবে এবং তাকে সে মামলায় শাস্তিও পেতে হবে।' ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমনের চেষ্টার কথা উলেস্নখ করে শফিকুর রহমান বলেন, যে কোনো মূল্যে গদি টিকিয়ে রাখতে হবে, এই জেদ ধরে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়। এটা ছিল সুস্পষ্ট গণহত্যা। শুধু স্থলভাগে নয়, আকাশ থেকেও গুলি চালানো হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের লাশ গুম করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়া আশুলিয়ায় ভ্যানভর্তি মানুষের মরদেহের কথা তুলে ধরেন। জামায়াতের আমির বলেন, 'সেখানে ট্রাকের (ভ্যান) ওপর লাশের স্তূপ। তারপর ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন। আমরা কোন সভ্যতায় বসবাস করছি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাব, এই গণহত্যা যারা সংঘটিত করেছে, অবশ্যই তাদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে।' জামায়াতের আমির ধনী-ব্যবসায়ী লুটেরাদের বিচার ও তাদের ক্ষমা না করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, 'গরিব দেশের কিছু চতুর ধনী জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে, ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দেশের বাইরে অর্থ নিয়ে গেছে। এই অর্থ ১৮ কোটি মানুষের। এদের আইনের আওতায় এনে অর্থও ফিরিয়ে আনতে হবে। এদের কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না।' বক্তব্যের শুরুতে জামায়াতের আমির একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে 'মিথ্যা তথ্য ও সাজানো আদালতের রায়ে' ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এই পাঁচজনসহ ১১ জন মৃতু্যদন্ডে দন্ডিত ও প্রয়াত নেতাকে তিনি স্মরণ করেন। দীর্ঘ বক্তব্যে শফিকুর রহমান বিগত সাড়ে ১৫ বছরে সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতন, কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া, গ্রেপ্তার, মামলার ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শুধু জামায়াত নয়, বিরোধী দল বিএনপি, হাজারো ওলামায়ে কেরামের ওপর একই ধরনের তান্ডব চালানো হয়েছিল। যদিও জামায়াতের ওপর তান্ডব ছিল ভিন্নমাত্রা, ভিন্ন গভীরতার। শত শত ছাত্র-জনতার বিপস্নবের মধ্য দিয়ে অর্জিত এ পরিবর্তনকে কেউ যাতে ব্যর্থ করে দিতে না পারে সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাড়ে ১৩ বছর পর দলের সারাদেশের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যদের সরাসরি উপস্থিতিতে এ অধিবেশন হয়।