মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ৮ সুপারিশ
প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে মিল দেখে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী।
বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির দ্বিতীয় তলার সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিশ্বমানের প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে যুগোপযোগী প্রস্তাবনা পেশ করার লক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৮টি সুপারিশও তুলে ধরেন তিনি।
আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। আর প্রাথমিক শিক্ষা এর মূল ভিত্তি। একটি উন্নত দেশ ও জাতি গঠনে শিক্ষা অপরিহার্য উপাদান। তাই বাংলাদেশকে নতুনভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে ৮ থেকে ১২ বছরের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ চালু রয়েছে। বর্তমান বিশ্বে যেভাবে দ্রম্নত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটছে তাতে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় কমপক্ষে ৮ বছর মেয়াদের একটি বাস্তবমুখী, পরিবেশভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু করতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব হবে না। যেহেতু ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ৮ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চলমান সেহেতু শিক্ষক নির্বাচনে কোনো প্রকার শিথিলতা বা দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় হবে না। কারণ মানসম্মত শিক্ষকই মানসম্মত শিক্ষা উপহার দিতে পারে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নেই এমন ব্যক্তি কখনো শিক্ষা বিভাগীয় কর্মকর্তা হতে পারেন না। কারণ শিক্ষায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ওই শিক্ষকরাই পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষা বিভাগীয় কর্মকর্তা হিসেবে সফলভাবে প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, পরিদর্শন, তত্ত্বাবধান, মনিটরিং এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে সক্ষম।
আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিজস্ব ক্যাডার রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কোনো ক্যাডার সার্ভিস না থাকায় বিশাল জনবলের জন্য অন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে। এতে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ, অভিজ্ঞ, মাঠ পর্যায়ের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল জনবল প্রাপ্তি সম্ভব হয়ে উঠছে না। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্বলতা ও জটিলতা এড়িয়ে সহকারী শিক্ষকদের (পুরুষ, মহিলা এমএ) নবম গ্রেডে উন্নীত করণসহ তাদের ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করে, পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করে স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। যেমন সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রাথমিক শিক্ষা, কিন্ডার গার্টেন, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষা, এনজিওচালিত শিক্ষা, ইংলিশ মিডিয়াম নামে যেসব প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে তাতে শিক্ষার সার্বজনীনতা বজায় থাকছে কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কারণ একটি সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কিন্ডার গার্টেন শিক্ষাব্যবস্থা ভিন্নধর্মী। একদিকে আছে আটপ্রৌঢ়ে জীবনের নূ্যনতম প্রয়োজন মেটানোর তাগিদ। অন্যদিকে রয়েছে আভিজাত্যের দাম্ভিক প্রকাশ, একদিকে জৌলুসবিহীন অবয়বে দারিদ্র্যের ছাপ, অন্যদিকে প্রাচুর্য প্রদর্শনীর মহড়া। প্রতিবেশী দুটি শিশুর মধ্যে যে শিশুটি কিন্ডার গার্টেনের আভিজাত্যের ছায়ায় শিক্ষা লাভ করছে তার মনে ধীরে ধীরে নিজের অজান্তেই দানা বাঁধছে এক ধরনের অহমিকা। নিজেকে তার প্রতিবেশী শিশুটির চেয়ে শ্রেষ্ঠতর মনে করছে, ধন, মান ও জ্ঞান সবদিক থেকে। পক্ষান্তরে অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিশুটির অনুভূতিতে হীনমন্যতাবোধ বাসা বাঁধছে দিনে দিনে। আর এভাবেই দুটি শিশুর মধ্যে গড়ে উঠছে এক অদৃশ্য দেয়াল, সমাজ হচ্ছে শ্রেণিবিভক্ত। এরূপ পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। এজন্য সারাদেশে একই কারিকুলাম ও পাঠ্যসূচির আওতায় ১ম শ্রেণি হতে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত একীভূত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা জরুরি প্রয়োজন।