জমি বিরোধের জের
ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আহত শতাধিক
তিন ঘণ্টা চলে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ভাঙচুর করা হয় চারটি বাস হাসপাতালে ভর্তি ৩৩ জন
প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বরিশাল অফিস
জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থী ও বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনার সময় ববির একটি ও বিএম কলেজের তিনটি বাস ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনুভা চৌধুরী জোয়ার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত সোমবার বিএম কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই প্রতিবেশীদের পক্ষ হয়ে বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে ঘটনাস্থলে গেলে জোয়াদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় জোয়ার পরিবারের বিরোধীয় বাড়ি দখল করতে হুমকি ও তার মাকে হেনস্তা করেন বিএম কলেজ সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাফি ও তার সহযোগী শিক্ষার্থীরা। এমন অভিযোগ জোয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তার সহপাঠী বন্ধুদের জানালে কিছু সময় পর ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থীরা এসে রাফিকে মারধর করে। পরে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যায়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করে ববি ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিকে ঘটনার জেরে মঙ্গলবার রাত ১১টায় নগরীর বটতলা এলাকায় ববির দুই শিক্ষার্থীকে পেয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মারধর করে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। তখন প্রাণ বাঁচাতে ওই দুইজন দৌড়ে পাশেই থাকা বটতলা পুলিশ ফাঁড়িতে আশ্রয় নেন। তারা হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী রাফিন কায়সার এবং মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ইমন খান।
সহপাঠীদের মারধর করার খবর পেয়ে রাত ১২টায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে করে সেখানে এলে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এতে বাসের চালকসহ কমপক্ষে ১৫/২০ জন আহত হন। পরে সহপাঠীদের মারধর করার খবর পৌঁছলে বাস-ট্রাক বোঝাই হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নগরীর বটতলা এলাকার আশপাশে এসে জড়ো হয়। অন্যদিকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাস ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। এসময় বিভিন্ন স্থানে উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে ববি শিক্ষার্থীরা হামলা চালায়। তারা কলেজের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদেরসহ সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। বিএম কলেজের এক শিক্ষার্থী যে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি বিরোধীয় জমি দখলের চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে হেনস্তা করেছে। আর তার প্রতিবাদ জানাতে গেলে ববি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, বিরোধ সমাধানের চেষ্টা চালাতে গিয়ে সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাফিসহ বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হয়েছেন। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে রাতে ববি শিক্ষার্থীরা শুধু বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর নয়, কলেজের প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক হল ও বেশকিছু বাস ভাঙচুর করেছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. উন্মেষ রায় জানান, হামলায় ব?রিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতা?ধিক শিক্ষার্থী হাসপাতাল থেকে চি?কিৎসা নিয়েছেন। এখনো ৩৩ জ?নের মতো ভ?র্তি রয়েছেন। ব?রিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফি?রে গিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় বিএম কলেজের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি বলেন, সোমবার রাতে বিএম কলেজ সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাফিকে মারধর করেন ববি শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত ১১টায় বটতলা এলাকায় অবস্থানকালে দুইজন ববি শিক্ষার্থীকে মারধর করে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। ববি শিক্ষার্থীদের মারধরে খবর ছড়িয়ে পড়লে দুই গ্রম্নপের মধ্যে হামলা ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া কোনো আটকও করা হয়নি বলে ওসি জানিয়েছেন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত প্রায় শতাধিক আহত শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তাদের মধ্যে অনেকের আঘাত গুরুতর। সবাইকে হাসপাতালের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের চেষ্টা করছি আমরা।