জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ভবিষ্যতে 'জাতীয় সরকারের' মাধ্যমে দেশ পরিচালনা চায় বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, 'স্বাধীনতার পর একটা জাতীয় সরকারের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসায় দেশ প্রথম দিন থেকেই বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে একটা বিরাট অংশ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশ গঠনে কোনো অবদান রাখতে পারেনি। স্বাধীনতার পরপর জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে ব্যবহার না করে সেদিন যে সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে, আগামী দিনে আমরা তার পুনরাবৃত্তি চাই না।'
তারেক রহমান আরও বলেন, এ দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তারা আগামী দিনে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন। যাতে দেশ তাদের অবদানের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয়।
বুধবার বিএনপির ঢাকা বিভাগের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ কথাগুলো বলেন। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন।
দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'আমাদের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার পরিকল্পনার কথা দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন মনে করছি। দেশে প্রথাগত রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, কিন্তু দেশ গঠন, উন্নয়ন ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে চান, এমন অসংখ্য জ্ঞানী, গুণী শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মী রয়েছেন; কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে তাদের পক্ষে সংসদে সদস্য হিসেবে অবদান রাখার সুযোগ নেই। তাদের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি উচ্চ কক্ষসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়।'
তারেক রহমান বলেন, 'আমি বিনয়ের সঙ্গে শুধু আমাদের আগামী দিনের পরিকল্পনা আর সদিচ্ছার কথা জানাতে পারি। কারণ, আমরা জানি, দেশের মানুষের সমর্থনই কেবল আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে।'
জাতীয় সরকারে কারা থাকবেন, তার ইঙ্গিত দিয়ে তারেক রহমান বলেন, 'জনগণ নিশ্চয়ই সেসব দল বা ব্যক্তিকে জাতীয় সরকারে শামিল দেখতে চাইবেন না, যারা পুরো দেশটাকে একটা দল আর পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল। যারা তথাকথিত উন্নয়নের নামে আমাদের প্রত্যেকের কাঁধে দেড় লাখ টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে হাজার হাজার, লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। গুম-খুন, হামলা-মামলা নির্যাতনে দেশের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছে। আইন, বিচার, নির্বাহী বিভাগসহ রাষ্ট্রের সবকটি স্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি পালিয়ে যাওয়ার পূর্বমুহূর্তেও শত শত নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত করেছে রাজধানীসহ সারাদেশ। জনগণ নিশ্চয়ই সেই জালিমদের জাতীয় সরকারে অন্তর্ভুক্ত দেখতে চাইবেন না।'
বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের আশা ও ভাষার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক সময়ের গজিয়ে ওঠা 'অদৃশ্য প্রতিপক্ষ' মোকাবিলায় নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর কৌশল প্রয়োগের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, 'আপনার আত্মত্যাগ আর অবদান মুষ্টিমেয় হঠকারীর অপকর্মে ক্ষতিগ্রস্ত হতে কেন দেবেন? সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন, প্রতিরোধ করুন।'
অপরাধীদের ক্ষমা নয় বিচার করতে হবে : রিজভী
এদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার নির্দেশে যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তাদের হত্যাকারীদের ক্ষমা করলে নিহতদের আত্মার সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারা বলছেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিয়েছে। গণহত্যাকারীদের কিসের ক্ষমা করতে বলেছে তারা।
তিনি বলেন, ট্রাইবু্যনাল করে প্রতিটি হত্যার বিচার করতে হবে, প্রতিটি অপরাধের বিচার করতে হবে। যদি শেখ হাসিনাসহ অপরাধীদের বিচার করা না হয় তাহলে বাংলাদেশ কবরস্থানে পরিণত হবে।
বুধবার দুপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে আন্দোলনে নিহত গোলাম রাব্বানীর বাবার হাতে অনুদান তুলে দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
শাহবাগ এলাকায় পিজি হাসপাতালের পাশে তাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে রিজভী এই অনুদানের টাকা তুলে দেন।
রিজভী বলেন, আমি আগেও বলেছি, নিরপরাধ কেউ যেন মামলার শিকার না হয়। কিন্তু যারা অপরাধী তাদের ক্ষমা করা যাবে না।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, আপনারা কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের কাজ করতে দিন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দেশনায়ক তারেক রহমান এ বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, দলের সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ডা. মনোয়ারুল কাদির বিটু, ডা. জাহিদুল কবির, মেহেবুব মাসুম শান্ত, আরিফুর রহমান তুষার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।