চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্বে আসছেন কারা

প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সন্‌জীব নাথ
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি গত রোববার বিলুপ্ত করা হয়। যে কোনো মুহূর্তেই ঘোষণা হতে পারে নতুন কমিটি। তাই নতুন নেতৃত্ব নিয়ে দলের তৃণমূলে চলছে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন। কাদের ওপর আস্থা রাখবে দলের হাইকমান্ড? কারা ধরছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির হাল? কারা আসছেন নেতৃত্বে? এসব প্রশ্ন ঘিরে এখন দলটির নেতাকর্মী ও তৃণমূলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এসব আলোচনা-গুঞ্জনের মধ্যে বসে নেই পদপ্রত্যাশীরা। পদ পেতে ছুটছেন কেন্দ্রে, ধর্না দিচ্ছেন সিনিয়র নেতাদের কাছে। চেষ্টা করছেন দলের হাইকমান্ডের কাছে নিজের ত্যাগ, দুঃসময়ে ভূমিকা ও অবস্থান তুলে ধরতে। দলটির তৃণমূল কর্মীদের প্রত্যাশা, দলের বিগত 'আন্দোলন-সংগ্রামে' যারা সক্রিয় ছিলেন তারাই নেতৃত্বে আসুক। আলোচনায় আছেন যারা: সভাপতি বা আহ্বায়ক পদে আলোচনায় আছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ ইদ্রিস মিয়া, সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ আলী আব্বাস। সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে আলোচনায় আছেন- বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম হোছাইনী, জেলা বিএনপি'র সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসহাব উদ্দিন চৌধুরী, বিলুপ্ত কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান, আনোয়ারা উপজেলা বিএনপি'র সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন। এ ছাড়া বিএনপি'র কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল এবং সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজামও সভাপতি হওয়ার জন্য লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। আরও রয়েছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা শাখাওয়াত জামান দুলাল। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে বিলুপ্ত কমিটির সদস্য নাজমুল মোস্তফা আমিন, জিয়াউদ্দিন চৌধুরী আশফাক, পটিয়া উপজেলা বিএনপি'র সদস্য সচিব মো. খোরশেদ আলম, আনোয়ারার মো. মনজুর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে বিএনপি নেতা মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাও তদবির করছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপি'র সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন বলেন, এমন নেতৃত্ব আসুক যারা সাবেক ছাত্রনেতা। সেই ১/১১ সময় থেকে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের মেয়াদকাল পর্যন্ত দুঃসময়ে যারা মাঠে ছিলেন এবং এ সময় আন্দোলন-সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করা হোক। একই সঙ্গে হাইব্রিডকে মূল পদে না রেখে তৃণমূলকে সম্পৃক্ত রেখে কমিটি দিলে সেটা তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য হবে। যারা নির্লোভ এবং দলের প্রতি আনুগত্যশীল তাদের নেতৃত্বে আনলে দলের যে চাওয়া সেটা পূরণ হবে। বিগত সময়ে এমন লোককে নেতৃত্বে আনা হয় যিনি রাজনীতি করেছেন নগরে, আবার তার বাড়িও চট্টগ্রাম জেলা নয়। এমন কেউ যেন আর নেতৃত্বে না আসে সেটাই সবার প্রত্যাশা। কামরুল ইসলাম হোছাইনী বলেন, যারা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিতর্কিত নন, যারা স্বচ্ছ ইমেজের অধিকারী এবং দলের জন্য যাদের ত্যাগ আছে তাদের নিয়ে কমিটি হোক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। দীর্ঘদিন দুঃসময়ে ঝুঁকি নিয়ে দলীয় কর্মকান্ডে নানা ভূমিকাসহ সব যেন বিবেচনায় আনা হয়। বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করলে আগের অবস্থা হবে এবং সেটা তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। মজিবুর রহমান বলেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, মাঠে-ময়দানে সক্রিয় আছেন, যারা আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করা হোক। বিগত সময় যারা মামলার শিকার হয়নি তাদের বিএনপি করারও অধিকার নেই। কারণ আন্দোলন থাকলেই মামলার শিকার হতেন তারা। আমি নিজেও ৩৪ মামলার আসামি। এমনকি ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালেও মামলা হয়েছে। আশা করছি দল মূল্যায়ন করবে। এদিকে ২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি'র কমিটি। ওইসময় জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। যা দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অনুমোদনও দিয়েছিলেন। পরে ২০১১ সালের এপ্রিলে আবারও পুর্নগঠন করা হয়। সেবার জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও গাজী শাজাহান জুয়েলকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সহ-সভাপতি করা হয়। তিন বছরের জন্য গঠিত এ কমিটি আট বছর পাঁচমাস দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভেঙে দেওয়া হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর মহানগর বিএনপি'র সিনিয়র তৎকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপি'র তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপি'র কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৭ মে কমিটির ৪নং সদস্য এনামুল হক এনামকে কমিটির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।