ভ্যানে লাশের স্তূপ আরও দুই পুলিশ শনাক্ত
প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ, এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে থাকা দেওয়াল, পোস্টার ও ঘটনাস্থল দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি আশুলিয়া থানার সামনের ভিডিও।
ভিডিওতে লাশের স্তূপ করা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। তাদের মধ্যে আরও দুই পুলিশ সদস্য শনাক্ত হয়েছেন। এর আগে এ ঘটনায় জড়িত ঢাকা জেলা-উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন ও ডিবি'র কনস্টেবল রেজাউল করিমকে শনাক্ত করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে আশুলিয়া থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য ওই দুজনকে শনাক্ত করেন।
এ ছাড়া তাদের ছবির সঙ্গে ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের মিলও পাওয়া যায়। ভিডিওতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দেখা গেলেও ৪ পুলিশ সদস্যকে স্পষ্ট দেখা গেছে। তারা হলেন- ঢাকা জেলা-উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, ডিবি'র কনস্টেবল রেজাউল করিম, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুল। তবে কনস্টেবল মুকুলের ছবিতে এসআই আবুল হাসানের নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আবুল হাসান।
গত ৩০ আগস্ট সারাদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভ্যানে লাশের স্তূপের একটি ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনের ভবনের দ্বিতীয়তলা থেকে ধারণ করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্য একটি লাশের হাত ও পা চ্যাংদোলা করে ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে অনেক লাশের স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। সবশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শেষে ঢাকা জেলা-উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলকে দেখা যায়।
ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী ও ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। ওই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার সামনে।
ভিডিওতে দেখা পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে আশুলিয়া থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ সদস্য ভিডিওতে থাকা ঢাকা জেলা-উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলকে শনাক্ত করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুকুলের ছবিতে এসআই আবুল হাসানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ ও কনস্টেবল মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে এসআই আবুল হাসান বলেন, আমি ৪ আগস্ট রাতে ডিউটি করে সকালে বাসায় চলে যাই। ৫ তারিখে আমি ডিউটিতে ছিলাম না।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ৪ সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তও করা হয়েছে। আমরা অল্প সময়ের মধ্যে সবার সামনে তুলে ধরব।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা গত ৫ আগস্ট নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। পরে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হন। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় ৫ আগস্ট ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট পর্যন্ত আশুলিয়ায় ২৮ জনের মৃতু্য হয় (ভ্যানে তোলা লাশের হিসাব বাদে)।