সাভারে শ্রমিক অসন্তোষ

কাজে ফিরেছেন বেশিরভাগ শ্রমিক, সেনা-বিজিবি টহল

গাজীপুরে চাকরির দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ঢাকার সাভারের শিল্পাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে অস্থিরতার মধ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকে সেনাসদস্য, শিল্পপুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা টহল দিয়েছেন। এতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে কিছু কারখানা বন্ধ রয়েছে। এদিকে, গাজীপুরে চাকরির দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি স্থানে পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শ্রমিকদের ইটপাটকেলে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সরেজমিনে সাভারে মঙ্গলবার সকাল থেকে কোথাও শ্রমিক বা বহিরাগত কারো তৎপরতা দেখা যায়নি। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে সেনাসদস্য, শিল্পপুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। তবে আশুলিয়ার শিমুলতলায় বন্ধ থাকা দ্য ড্রেস অ্যান্ড দ্য আইডিয়াস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকাল থেকে কারখানার সামনে অবস্থান নেন। কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে অর্ধশতাধিক শ্রমিক কারখানার মূল ফটক ও কারখানার উল্টো পাশে একটি বিপণিবিতানের সামনে তারা অবস্থান নেন। এ সময় শ্রমিকরা জানান, মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে সড়কে টহলরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তারা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। তারা শ্রমিকদের সড়কে অবস্থান না করা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, এমন কোনো কাজ না করতে অনুরোধ করেন। শ্রমিকরা জানান, দ্য ড্রেস অ্যান্ড দ্য আইডিয়াস কারখানা থেকে গত শনিবার চারজন নারী সুপারভাইজার ও একজন লাইনম্যানকে চাকরিচু্যত করা হয়েছে। পরদিন রোববার থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সোমবার রাত দেড়টার দিকে শ্রমিকরা জানতে পারেন, ট্রাকে করে কারখানা থেকে যন্ত্রপাতিসহ মালামাল সরিয়ে ফেলছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ভোরে তারা কারখানার সামনে অবস্থান নেন। সকাল ১০টার দিকে কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার মূল ফটকের সামনে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অবস্থান করছেন। কারখানার অপর পাশের একটি বিপণিবিতানের সামনে অর্ধশতাধিক শ্রমিক অবস্থান নিয়ে আছেন। কারখানার ফটকে টাঙানো রয়েছে বন্ধের নোটিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, 'আমাদের দাবি কারখানা চালু হোক। আমাদের বেতন দেওয়ার সময় হয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকলে বেতন কবে পাব জানি না।' এ ছাড়া ওই এলাকায় নাবা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানাটিও বন্ধ রয়েছে। এর আগে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ কারখানায় কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকরা। কয়েকটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। গত কয়েক দিনের বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ করে চলা বিক্ষোভের চিত্র দেখা যায়নি কোথাও। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, শিল্পপুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা। পলাশবাড়ী এলাকার গিল্ডান বাংলাদেশ নামের পোশাক কারখানা বন্ধ অবস্থায় দেখা যায়। মঙ্গলবার সকালে নাসা গ্রম্নপের কারখানায় শ্রমিকরা উপস্থিত হলেও কাজ করেননি। পরে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গিল্ডান বাংলাদেশ কারখানার নিরাপত্তারক্ষী মো. মিন্টু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'আমাদের সব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। গত কয়েক দিন শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করেছেন। আজ (মঙ্গলবার) কেউ আসেননি।' বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার পারভেজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ডিইপিজেডের পুরনো ও সম্প্রসারিত জোনে মোট ৮৬টি শিল্পকারখানা রয়েছে। সবক'টি কারখানায় শান্তিপূর্ণভাবে কাজ চলছে। আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সাভার ও আশুলিয়ায় আজকের (মঙ্গলবার) পরিস্থিতি স্বাভাবিক। শ্রমিকরা নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করায় ছুটি দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বন্ধ থাকা এবং ছুটি দেওয়া কারখানার সংখ্যা নির্ণয়ে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে সংখ্যাটি খুব বেশি নয়। গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, চাকরির দাবিতে জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। মঙ্গলবার সকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস, ছয়দানা, হাজির পুকুর, মালেকের বাড়ি, সাইনবোর্ড এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ও প্রীতি গার্মেন্টসের চাকরিচু্যত শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ করে। শ্রমিক বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শ্রমিকদের ইটপাটকেলে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে শিল্পপুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে এতে শিল্প পুলিশের এএসপি মোশরাফ হোসেনসহ পাঁচজন আহত হন। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কারখানা শ্রমিক ও শিল্পপুলিশ জানায়, বিভিন্ন পোশাক কারখানায় নারীশ্রমিকদের পাশাপাশি সমঅধিকারের ভিত্তিতে পুরুষশ্রমিক নিয়োগের দাবি জানায় শ্রমিকরা। ওই দাবিতে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্পপুলিশ, থানাপুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। সকাল দশটার দিকে গাজীপুর মহানগরীর সাইনবোর্ড ও মালেকের বাড়ি এলাকা থেকে শ্রমিকরা সরে গেলেও বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা ভোগরা বাইপাস এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ভোগরা বাইপাস এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তারা কারখানায় চাকরি করলেও তুচ্ছ কারণে তাদের চাকরিচু্যত করা হয়। চাকরি না পেয়ে তারা বেকারত্ব জীবনযাপন করছেন। তাই তাদের চাকরির দাবিতে এই বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন। তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। গাজীপুর শিল্পপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান হোসেন জানান, সকাল থেকেই গাজীপুরের বেশ কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন পোশাক কারখানার চাকরিচু্যত শ্রমিকরা তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে যানবাহন চলাচলে বাধা প্রদান করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।