বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ ঢাকা পথে পথে ভোগান্তি

রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, বনশ্রী, রামপুরা, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, মিরপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুরসহ আশপাশের এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। দুই ঘণ্টায় ঢাকায় প্রায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

বিশেষ প্রতিনিধি
মঙ্গলবার বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগে পড়েন নরগবাসী। ছবিটি মিরপুর কাজীপাড়া এলাকা থেকে তোলা -নাজমুল ইসলাম
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে মুষলধারে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ভাদ্রমাসের শেষ সপ্তাহে যে বৃষ্টি হয়েছে, তা আষাঢ়ের বৃষ্টিকেও হার মানিয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে থেমে থেমে বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটেছে। তালপাকা ভাদ্রমাসের তীব্র গরমের মধ্যে এই বৃষ্টি স্বস্তি নিয়ে আসে। তবে মঙ্গলবার রাত থেকে কয়েক ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক। এতে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা, যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন কর্মব্যস্ত মানুষ। রাস্তায় ভিজে একাকার হয়েছেন অনেকে। বৃষ্টিতে অনেক এলাকার অলিগলিতেও পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। এতে অফিসগামী মানুষ ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে। অনেকে যানবাহন ও রিকশা না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে। অনেককেই আশ্রয় নেন ফ্লাইওভার, ওভারব্রিজের মতো স্থাপনার নিচে। এর মধ্যে বিপাকে পড়েন মোটর সাইকেল চালক ও যাত্রীরা। মঙ্গলবার রাজধানীজুড়ে ভোর থেকে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। সেই মুষলধারে বৃষ্টিতে ডুবেছে ঢাকার প্রধান সড়ক ও অলিগলি। রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, বনশ্রী, রামপুরা, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, মিরপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারাসহ আশপাশের এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ঢাকায় প্রায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ ও সংসদ ভবনের রাস্তায় হাঁটুসমান পানিতে ভয়াবহ জলজটের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও রাফা পস্নাজার সামনে কোমরসমান পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। বৃষ্টিতে কয়েকটি প্রাইভেটকার নষ্ট হয়ে রাস্তায় পড়েছিল। এ ছাড়া আদাবর, নূরজাহান রোড, ধানমন্ডি, কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোড, কাঁঠালবাগান, শেওড়াপাড়া, মালিবাগ, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, বংশাল, বকশীবাজার, সাতরাস্তা, তেজগাঁও, তেজকুনীপাড়া, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, বসুন্ধরা, বারিধারা, গুলশান, বনানী, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। বেলা ১২টার পর কিছু কিছু এলাকা থেকে পানি নেমে যেতে দেখা গেছে। বৃষ্টির কারণে গ্রিন রোডে সিএনজিচালিত অটোরিকশা পানিতে আটকে থাকতে দেখা যায়। এদিকে কারওয়ান বাজারে রিকশার আসন পর্যন্ত পানি উঠতে দেখা গেছে। কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে মূল সড়কের একাংশ পানিতে ডুবে থাকতে দেখা গেছে। ফলে গাড়িগুলোয় রাস্তার একপাশ দিয়ে চলতে দেখা গেছে। এতে যানজট দীর্ঘ হয়। রাজধানীর অধিকাংশ প্রধান সড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট। মিরপুর সড়কের টেকনিক্যাল বাসস্ট্যান্ড থেকে সাইন্সল্যাব পর্যন্ত উভয় পাশে থেমে থেমে তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে। যানজট তৈরি হয় কাজী নজরুল ইসলাম সরণি সড়কেও। মিরপুর এলাকার অধিকাংশ সড়কে তীব্র যানজট হয়। মহাখালী এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম অংশে পানি জমে যায়। এতে মূল সড়কের একাংশ পানিতে ডুবে যায়। ফলে গাড়িগুলোকে রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলতে দেখা গেছে। মূল সড়ক ছাড়াও অলিতে গলিতে পানি জমে যায়। বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় কোথাও জমে হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমরসমান পানি। এসব অলি-গলিতে জলযট সৃষ্টি হয়। রাজধানীর জলাবদ্ধতার কারণে অনেক স্থানে সড়কে বিকল হয়ে পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন। এতে ঢাকাজুড়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়। সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে সেটিকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারী, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারী এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ছত্তিশগড় এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হতে পারে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টির ফলে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।