টঙ্গীতে কারখানা ভাঙচুর-হামলা
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান ও নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হারে নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিক ও চাকরি প্রত্যাশীরা।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে আশুলিয়ার ডিইপিজেড এলাকায় প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করে চাকরি প্রত্যাশীরা। পরে তারা বাইপাইল-আবদুলস্নাহপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়।
পরে আবার বাইপাইল-আবদুলস্নাহপুর সড়কের নিশ্চিন্তপুর ও জামগড়া এলাকার বিভিন্ন কারখানার সামনে জড়ো হওয়া চাকরি প্রার্থীরাও একযোগে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলে বলে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম জানান।
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জিরানী এলাকার উত্তরা নিটিং ডাইং কারখার মূল ফটকের পাশে অফিস কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার স্বার্থে অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় এক দিনের ছুটি ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে বেশ কিছু ব্যক্তি লাঠিসোঁটা নিয়ে জামগড়া এলাকার দি রোজ ড্রেসেস কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে তারা আইডিএস কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে চলে যায়।
শ্রমিকদের ভাষ্য, যারা ইটপাটকেল ছুড়েছে, তারা শ্রমিক কি-না তা বোঝা যায়নি। তবে তারা চাকরি প্রার্থী হতে পারেন। কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়লে সড়কের দুই পাশের অধিকাংশ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামন মিন্টু বলেন, 'সোমবার সকালে শ্রমিকরা হাজিরা বোনাস প্রদান, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ ও অর্জিত ছুটির টাকাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় আশপাশের কারখানা থেকেও শ্রমিকরা বেরিয়ে আসে।
পরে নিরাপত্তার স্বার্থে বাইপাইল থেকে জামগড়া ও আশুলিয়া রোডের ছোট-বড় অসংখ্য কারখানা এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে একই দাবিতে রোববার নরসিংহপুর এলাকার নাশা গ্রম্নপের শ্রমিকরা আন্দোলন করলে ওইদিন কর্তৃপক্ষ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে বলে খায়রুল মামুন জানান।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার বলেন, 'শ্রমিকরা আন্দোলন করছে চাকরির দাবিতে। পোশাক কারখানায় নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হারে নিয়োগের দাবিসহ আরও কয়েকটি দাবি আছে তাদের।
'আমরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাইপাইল-আবদুলস্নাহপুর সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে পেরেছি। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।'
টঙ্গীতে শ্রমিক বিক্ষোভ কারখানায় ভাঙচুর-হামলা :এদিকে, গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, চাকরির দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে চাকরিচু্যত শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা নয়টি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় বাদশা মিয়াসহ (২১) এক নারী শ্রমিক আহত হয়। আহত ওই নারী শ্রমিকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহত শ্রমিককে টঙ্গীর শহীদ আহসান উলস্নাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কারখানায় ভাঙচুর ঠেকাতে ১১ কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে টঙ্গীর বিসিক এলাকায় কয়েকশ' শ্রমিক বিক্ষোভ করে।
ছুটি ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো টঙ্গীর বিসিক এলাকার টসি নিট ফেব্রিক্স লিমিটেড, ন্যাশনাল কম্পোজিট লিমিটেড, পেট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লিমিটেড, বেলিসিমা অ্যাপারেল্স লিমিটেড, জিন্স এন্ড পোলো লিমিটেড, টেঙ্গন গার্মেন্টস লিমিটেড, রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড, আরবিএস গার্মেন্টস লিমিটেড, গার্ডেন টেক্সটাইল লিমিেিটড, সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড ও তাজকিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড।
অন্দোলরত শ্রমিকরা জানান, সকালে থেকেইে টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকার সব পোশাক কারখানার শ্রমিকরা নিজ নিজ কারখানায় কাজে যোগদান করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিন শতাধিক চাকরিচু্যত শ্রমিকরা বিভিন্ন দলে ১১টি পোশাক কারখানার প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। এ সময় ওইসব কারখানায় কর্মরত নিয়মিত (রেগুলার) শ্রমিকরা চাকরিচু্যত শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালে কর্মরত শ্রমিকরা অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে অন্দোলরত শ্রমিকরা ১১টি কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। কারখানায় ভাঙচুর ঠেকাতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বাধা দিলে চাকরিচু্যত শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর এড়াতে দুপুর ২টায় ১১টি কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। এ সময় চাকরিচু্যত শ্রমিকরা টঙ্গীর বিসিক এলাকার পানির ট্যাঙ্ক এলাকার শাখা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
চাকরিচু্যত শ্রমিক রনি বলেন, 'আমরা কয়েক সপ্তাহ আগেও বিক্ষোভ করেছিলাম। কারখানাগুলোতে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। চাকরিতে থাকা শ্রমিকরা আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়নি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কোনো গার্মেন্টসে শ্রমিকদের ঢুকতে দেওয়া হবে না।'
তাজকিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার) হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সকালে বহিরাগত শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে প্রধান ফটকে ভাঙচুর চালালে ক্ষতি এড়াতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছি।'
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন বলেন, চাকরিতে বৈষম্য ও পুরুষ শ্রমিকদের নিয়োগে অগ্রাধিকারের দাবি জানিয়ে কয়েকশ' চাকরিচু্যত শ্রমিক ১১টি কারখানায় ভাঙচুর করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা টঙ্গীর বিসিকের একটি সড়কে অবস্থান নিলে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।