অবসরভাতাসহ ১১ দাবি প্রবাসীদের

প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অবসরভাতা নিশ্চিতসহ ১১ দফা দাবিতে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রবাসীরা -ফোকাস বাংলা
দীর্ঘ সময় ধরে প্রবাসে থেকে দেশে ফেরত আসার পর যুক্তিসঙ্গত অবসরভাতা নিশ্চিতসহ ১১ দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে তারা এসব দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাসুদ নামের এক প্রবাসী। তিনি বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুই কোটির বেশি লোক বর্তমানে প্রবাসে অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কর্মরত। প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশে পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক অবস্থার টেকসই উন্নয়নে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে বিধায় তাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলা হয়। তিনি আরও বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন, স্কুল-মাদরাসা, মসজিদ-হাসপাতাল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডেও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় এবং নাগরিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামেও প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। প্রবাসী মাসুদ বলেন, প্রবাসীরা নিজেদের পরিবার-পরিজন ছেড়ে প্রবাসে থেকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সার্বিক ক্ষেত্রে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তারা এবং তাদের পরিবার নানাভাবে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে এবং যথাযোগ্য মূল্যায়ন পাচ্ছে না। প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যরা অভিভাবকহীনভাবে দেশে থাকলেও তাদের দেখার কেউ নেই। তিনি বলেন, প্রবাসীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূরীকরণের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা এবং সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন। প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য প্রবাসীরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে কিছু যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন করছে। প্রবাসীদের যত বেশি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে তত বেশি রেমিট্যান্স আসবে দেশে। আর রেমিট্যান্স প্রবাহ সচল থাকলে দেশের অর্থনীতির দ্রম্নত উন্নতি ঘটবে। ১১ দফা দাবি ১। ১৫ বছর প্রবাসে থেকে দেশে চলে এলে যুক্তিসঙ্গত প্রবাসী অবসরভাতা দিতে হবে। ২। প্রবাসীরা প্রবাসে কিংবা ছুটিতে দেশে এসে কোনো কারণে মৃতু্যবরণ করলে বা কর্মক্ষেত্রে শারীরিক পঙ্গুত্ববরণ করলে এককালীন তার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা প্রণোদনা বা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। ৩। কোনো প্রবাসী প্রবাসে মারা গেলে ওই প্রবাসীর লাশ রাষ্ট্রীয় খরচে এবং ব্যবস্থাপনায় দেশে ফেরত আনতে হবে এবং স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে। ৮। প্রত্যেক প্রবাসীকে প্রবাসী পরিবার নামে বিশেষ স্মার্ট কার্ড দিতে হবে। ওই স্মার্ট কার্ড দিয়ে বাংলাদেশের সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ প্রত্যেকটি সেক্টরে প্রতিটি কাজে যেমন- মেডিকেল ট্রিটমেন্ট ইউনিয়ন অফিস, থানা, সিটি করপোরেশন, ভূমি অফিস, পরিবহণ সেক্টর থেকে শুরু করে সব নাগরিক সেবায় প্রবাসীর পরিবার যেন সুফল ভোগ করতে পারে। ৫। শুধুমাত্র পাসপোর্ট, ভিসা কপি অথবা আকামা কপি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রবাসীদের সহজ শর্তে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত বা মালিকানাধীন অন্যান্য ব্যাংক থেকে বিনা সুদে বা সহজ শর্তে গৃহঋণ, ব্যবসায়িক ঋণসহ অন্যান্য ঋণ দিতে হবে এবং কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশ গমনে আগ্রহী ব্যক্তিকেও এসব ব্যাংক থেকে ঋণ দিতে হবে। ৬। কোনো কারণে বাংলাদেশে কোনো প্রবাসীর নামে কোনো ধরনের মামলা-মোকদ্দমা হলে তা দ্রম্নত নিষ্পত্তির বিধিবিধান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯০-১২০ দিন সময় দেওয়া যেতে পারে। ৭। প্রবাসে কোনো প্রবাসীর কোনো রকম সমস্যা হলে বাংলাদেশ দূতাবাস সব ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। প্রবাসীদের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করতে হবে। বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পালন বা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রশাসনিক ও আইনি কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। ৮। অসুস্থতার কারণে কোনো প্রবাসী দেশে এলে বাংলাদেশের সব সরকারি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। ৯। প্রতিটি প্রবাসী পরিবারের নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রবাসী পরিবারের সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসী পরিবারের সামাজিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্র বা সরকার উপযুক্ত নীতিমালা ও কর্মপন্থা তৈরি করে তা যথাযথ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবেন। ১০। এয়ারপোর্টে কোনো ধরনের লাগেজের ক্ষতি হলে প্রতিটি খালি লাগেজের জন্য ২০ হাজার টাকা সাত দিনের মধ্যে দিতে হবে এবং লাগেজের ভেতরের কোনো মালামাল চুরি হলে প্রতি কেজির মূল্য গড়ে ২০ হাজার টাকা করে বিমান কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের মধ্যে দিতে হবে। এয়ারপোর্টের ট্রলি এয়ারপোর্ট পার্কিং এরিয়ায় নেওয়ার সুবিধা করে দিতে হবে। ১১। অভিবাসনের ক্ষেত্রে এবং বিদেশযাত্রায় হয়রানি প্রতিরোধ করতে হবে এবং বিমানবন্দরে জটিলতা ইত্যাদি নিরসনে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রবাসীরা বাংলাদেশে আসা এবং বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতায় পড়েন, সেসবের স্থায়ী নিরসন করতে হবে এবং প্রবাসীদের বিদেশে গমনাগমন সহজ ও সুশৃঙ্খল করার কার্যকর বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।