দুই জেলায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রোববার সকালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর মাঝগাতি এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ জন এবং শনিবার রাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর দগরিয়া এলাকায় মাইক্রোবাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, রোববার সকালে কাশিয়ানী উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ সময়ে আরও ৪০ জন আহত হন। নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জ সদর থানার সুলতান শাহী গ্রামের মোতালেব শেখের ছেলে মো. রইচ হোসেন শেখ (২২), খুলনা সদরের মোসা. তহুরা (৫০), তার মেয়ে তানিয়া আফরোজ তানিয়া (২৪), মো. সাহিদুর রহমান (৩৫), মামসাদ আলী (৪০) ও মো. সাগর মোল্যা (২৪)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন সকালে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহণের একটি যাত্রীবাহী বাস গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতি এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে ৬ জন নিহত হন। আহত হন ৪০ বাসযাত্রী। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে কাশিয়ানী, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও খুলনা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠান।
কাশিয়ানী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জিলস্নুর রহমান বলেন, 'নিহতের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।'
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার দগরিয়া এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সিমেন্টবাহী কাভার্ডভ্যান ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন পরিবারের চার নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ওই মাইক্রোবাসের চালক ও পরিবারগুলোর আরও তিনজন সদস্য।
নিহত চারজন হলেন- রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্দি ইউনিয়নের আবদুলস্নাহপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী কামরুন্নাহার বেগম (৩৫), আনোয়ার হোসেনের ছেলে সাজিদ (১২), এমরান মিয়ার স্ত্রী তানজিনা আক্তার (২৪), সাদ্দাম মিয়ার মেয়ে ছাবিহা (১৪) ও একই গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪৫)।
দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন- আনোয়ার হোসেন (৪৫), এমরান রহমান (২৮), মিতু আক্তার (১৭) ও লিপি আক্তার (২৮)।
একাধিক আহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনরা জানান, একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে রায়পুরার চরসুবুদ্দি থেকে তিন পরিবারের সাত সদস্য রাজধানী ঢাকায় গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে রাতে তারা বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে ওই মাইক্রোবাস নরসিংদীর দগরিয়া এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা একটি সিমেন্টবাহী কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুমড়েমুচড়ে গিয়ে মাইক্রোবাসের চালকসহ আটজন গুরুতর আহত হন।
স্থানীয় লোকজনের
মাধ্যমে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. রায়হান দ্রম্নত ঘটনাস্থলে যান। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মাইক্রোবাস কেটে আটজনকে উদ্ধার করেন। তাদের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই ওই চারজনের মৃতু্য হয়। তাদের মৃত ঘোষণার পাশাপাশি গুরুতর আহত চারজনকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, 'চারজনকে মৃত অবস্থায় এবং চারজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আহত চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।'
নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. রায়হান বলেন, 'চালকসহ আটজনকেই আমরা জীবিত উদ্ধার করেছিলাম। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে চারজন নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন। আহত চারজনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে মাইক্রোবাস চালক আনোয়ার হোসেন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোরে মারা গেছেন।'