আওয়ামী লীগ নেতাদের দুটি হাউজিং কোম্পানিকে সুবিধা দিতেই ময়মনসিংহের 'স্টিল আর্চ সেতু' প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি টাকা। প্রকল্পের অর্থ লুটপাট করতে খাসজমির পরিবর্তে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে জড়িত প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিশাল একটি সিন্ডিকেট। দ্রম্নত প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় ঠেকাতে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ভুক্তভোগীদের তরফ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটা দাবি করেন মো. মোশাররফ হোসেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে ৫ হাজার ৪৪১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮টি প্রকল্প অনুমোদন করেন। যার একটি ময়মনসিংহের কেওয়াটখালী সেতু প্রকল্প।
বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিডেজ (ইক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন) ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ঢাকার নিরাপদ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। সেই লক্ষ্যে ময়মনসিংহে ব্রহ্মপূত্র নদের ওপর ৩২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু, ৭৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের সংযোগ সেতু, ৫৫১ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক ওভারপাস, ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের রেলওয়ে ওভারপাস ও চারলেন বিশিষ্ট ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে কেওয়াটখালী সেতুটি হবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজের মতো স্টিলের সেতু। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে।
প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। যার মধ্যে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে। বাকি অর্থ আসবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইবিবি) থেকে। ২০২৫ সালের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে।
ভুক্তভোগী মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রকল্পের সংযোগ সড়কের নকশায় ব্যাপক ত্রম্নটি রয়েছে। কারণ সংযোগ সড়কটি অন্তত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ঘুরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যেটির কোনো প্রয়োজনই ছিল না। কারণ মাত্র ৮০০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলেই কাজ হতো। এই সড়ক নির্মাণের জন্য রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করারও কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ অতি সহজেই সেখানে থাকা খাসজমির ওপর দিয়েই সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব ছিল। এতে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। মূলত রাষ্ট্রের অর্থ হরিলুট করার জন্যই এসব করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মূল সংযোগ সড়কের অদূরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ময়মনসিংহ ও ব্রহ্মপুত্র হাউজিং প্রকল্প নামে দুটি আবাসিক এলাকা রয়েছে। আবাসিক এলাকা দুটিকে আরও খোলামেলা করতেই প্রকল্পের সংযোগ সড়কের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। এমনকি প্রকল্পের টাকা হরিলুট করতে সংযোগ সড়ক ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বড় করা হয়েছে। অথচ যার কোনো প্রয়োজনই নেই। একই সঙ্গে সংযোগ সড়কের জন্য অন্তত এক হাজার মানুষের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।