সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেছেন, 'ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পারবেন না। ষড়যন্ত্র করে মানবিক মূল্যবোধকে নষ্ট করতে পারবেন না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে, সেই বাংলাদেশকে কলুষিত করার ক্ষমতা আপনার নেই।'
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে 'গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল, সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিকের হত্যার বিচার এবং সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, 'ভেবেছিলাম ফ্যাসিবাদ পতনের পর কোনো দাবি-দাওয়ার জন্য রাজপথে নামতে হবে না। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার চাইতে আমাদের রাজপথে নামতে হচ্ছে। সাগর-রুনির হত্যার বিচার চাইতে হবে কেন। এটা নিয়ে এত টালবাহানা কেন। কেন আপনারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না। কেন কোনো পুলিশের তদন্ত করেন নাই, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।'
বিএফইউজের এই সভাপতি বলেন, 'আমাদের আন্দোলনকে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে। সাংবাদিকদের সব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে হবে। সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠানে কোনো ভাড়া করার নিয়োগ আমরা মানব না।'
রুহুল আমিন গাজী বলেন, 'কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করছে। আমরা এটা ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করি। হত্যা মামলার দায়ের করতে হলে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে। শুধু শুধু একজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা আমরা ঠিক মনে করছি না। যার যেটুকু অপরাধ, তার শুধু সেটুকুই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু হত্যা মামলার মতো মামলা দায়ের করতে হলে আপনাকে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করে মামলা করতে হবে।'
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, 'সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার ১২ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা কোনো বিচার পাইনি। যেহেতু ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে, তাই বর্তমান সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। কারণ, এই হত্যাকান্ডে ফ্যাসিবাদী সরকার জড়িত। পাশাপাশি সাংবাদিকদের কণ্ঠ বন্ধ করার জন্য যত কালাকানুন আছে, সব বাতিল করতে হবে। আমরা যেমন সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই, ঠিক একইভাবে আর কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে যেন কোনো সাংবাদিক আহত না হয়, সেটাও চাই।'
ত্যাগী সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে 'সাংবাদিক সমাজকে কলুষিত করা হচ্ছে উলেস্নখ করে বিএফইউজের এই মহাসচিব বলেন, 'ফ্যাসিবাদের পতনের আগেও রাস্তায় থেকে গুলির সামনে দাঁড়িয়ে আমরা সমাবেশ করেছি। তখন বলেছিলাম, ছাত্রদের ওপর গুলি বন্ধ কর, না হয় আমাদের ওপর গুলি কর। কোনোদিন সাংবাদিকতা করতে গিয়ে, কারও অফিসে এক কাপ চাও খাইনি। শুধুমাত্রই সাংবাদিকতা করেছি, সত্যের পেছনে ছুটেছি। রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন করলেও কোনোদিন দলদাসের মতো কাজ করিনি। এরপরও কিছু লোক আছে, ত্যাগী সাংবাদিকদের কলুষিত করছে। একটি পত্রিকা আমার নামে বড় করে পত্রিকার প্রথম পাতায় লিখেছে, আমি নাকি চাঁদাবাজি করি।'
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, 'এত কিছু করার পরও এমন খবর শুনলে কষ্ট লাগে। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ যাচাই করে যদি প্রমাণ করা যায়, তাহলে নাকে খত দিয়ে দেশ থেকে চলে যাব।'
সমাবেশে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান প্রতিবেদক মোরসালিন নোমানি বলেন, 'আমি তিনটি বিষয়ে কথা বলতে চাই। প্রথমটি হচ্ছে- সাগর-রুনির হত্যাকান্ড। এই হত্যাকান্ডের ১২ বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। হত্যাকান্ডের সময় বলা হয়েছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরা হবে। কিন্তু এত দিনেও তা ধরা হয়নি। আমার দাবি হচ্ছে, সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের সময় তৎকালীন যে পুলিশ প্রধান ছিল, তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। দ্বিতীয়টি হচ্ছে স্বৈরাচার সরকারের পতনের সময় যে চারজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আর তৃতীয়টি হচ্ছে, ১৬ বছর যখন ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় যেসব সাংবাদিক তেল দেওয়ার কাজ করেছিল, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। যাতে করে আর তারা কোনো সংবাদ সম্মেলন না করতে পারে।'