মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিএনপির নামে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাকে পুলিশে দিন

কুমিলস্নায় মির্জা ফখরুলের আহ্বান
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না
  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শনিবার কুমিলস্নার লালমাই উপজেলার ছোট শরিফপুর এলাকায় বন্যাকবলিতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -ফোকাস বাংলা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সময় দিতে চাই। নতুন যে সরকার- সেটি মাত্র ২০-২২ দিন হলো। আমরা সরকারের সাথে আলোচনা করেছি, যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তারা তৈরি করতে পারে। নতুন এ সরকারকে সময় দিতে হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানের মধ্যদিয়ে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, সেই বিজয়কে নস্যাৎ করার চেষ্টা চলছে। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি চাঁদাবাজি করতে আসে, তবে তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিন। এখন আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।'

শনিবার বেলা পৌঁনে ১২টার দিকে কুমিলস্নার লালমাই উপজেলার ছোট শরীফপুর এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে এসে সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মো. মনিরুল হক চৌধুরী।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'কোনো চাঁদাবাজদের সাথে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। আপনাদের এলাকায় কেউ যদি বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করতে আসে, তবে তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। আজকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার মতো খবর প্রকাশ হচ্ছে। এসব কর্মকান্ডের সাথে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।' তিনি বলেন, 'আমরা যদি ভালো একটা নির্বাচন করতে পারি, যদি জনগণের মনোনীত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া যায়- তবেই জনগণের আস্থা ফিরবে। তাই আমরা এই সরকারকে বলেছি, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে জনগণের মনোনীত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।'

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছিলেন- দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক ও

কুমিলস্না দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন, বিএনপি নেতা মোস্তাক মিয়া, আবুল কালাম, কুমিলস্না মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্যসচিব ইউসুফ মোলস্না টিপুসহ জেলা ও মহানগর এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লালমাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ করিম।

শনিবার বিকালে মির্জা ফখরুল জেলার নাঙ্গলকোট ও পরে সদর দক্ষিণ উপজেলার স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত পৃথক আরও দুইটি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

এসব সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা কোথায়? ওরা আজ পালিয়েছে। আমরা (বিএনপি) কি পালিয়েছি? বেগম জিয়া কি পালিয়েছে? ওরা-ই (আওয়ামী লীগ) পালিয়েছে। তাদেরকে পালিয়ে চলে যেতে হয়েছে কেন? আমাদের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আওয়ামী লীগ পালিয়ে চলে গেছে কিন্তু ওদের ভূত প্রেতাত্মারা এখনও পালায়নি। তারা আবারও চেষ্টা করবে, কী করে তারা ফিরে আসতে পারবে।'

তিনি বলেন, 'আমরা ১৫-১৬ বছর ধরে অত্যাচারিত হয়েছি। আওয়ামী লীগ আমাদের প্রায় ৭০০ মানুষকে গুম করে দিয়েছে। লাকসামের জনপ্রিয় বিএনপি নেতা হিরু (সাইফুল ইসলাম হিরু) ও পারভেজকে গুম করেছে। ঢাকায় প্রায় ৭০০ লোককে গুলি করেছে। আমাদের কয়েক হাজার লোককে গুলি করে হত্যা করেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমাদের ছেলেমেয়েদের পাখির মতো গুলি করে মেরেছে। এদের হাত থেকে আমরা এখন মুক্ত হয়েছি, তবে এই যে এখন স্বাধীনতা- এই স্বাধীনতাকে সুসংহত করতে হবে। এটাকে এখন জোরদার করতে হবে। ছাত্র-জনতার যে ঐক্য তৈরি হয়েছে- সেই ঐক্যকে আরও শক্ত করে ধরতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্বাধীনতাকে সুসংহত করতে হবে, যা খুশি তা করতে গেলে আমাদের এই স্বাধীনতা থাকবে না।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখন যে রাষ্ট্রব্যবস্থা আছে, এভাবে রাষ্ট্র চলতে পারে না। এজন্য আমাদের অর্থনীতিকে, বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে সাজাতে হবে। আমাদের মিডিয়াকে সাজাতে হবে। সর্বোপরি ইলেকশন কমিশনকে সাজাতে হবে। এর জন্য তো সময় লাগবে। সেই সময় পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।'

এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মো. মনিরুল হক চৌধুরী, বিএনপির কুমিলস্না বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালামসহ দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির এসব সমাবেশে দুর্গত মানুষের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের ঢল নামে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে