স্থবির হয়ে পড়ছে রসিকের কার্যক্রম
প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
আবেদুল হাফিজ, রংপুর
সরকার পরিবর্তনের পর থেকে রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। সেখানে সেবাগ্রহীতাদের আনাগোনাও কমে যাওয়ায় নাগরিক সেবাদানকারীদের ব্যস্ততায় পড়েছে ভাটা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রসিকের মেয়রকে অপসারণ ও আওয়ামী ঘরানার কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে মামলার জের ধরে বর্তমানে রসিকে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। তবে রসিকে প্রশাসক পদে বিভাগীয় কমিশনারকে নিযুক্ত করা হলেও তিনি হত্যাসহ দুটি মামলার আসামি হয়েছেন। এসব কারণে তিনি রসিকে তেমন একটা সময় দিচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন ১৯ আগস্ট রসিকে প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি দু'একদিন রসিকে সময় দিলেও অধিকাংশ কর্মদিবসে তিনি বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। যোগদানের দিন থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ১১ দিন পেরিয়ে গেছে তার। এতে করে রংপুর সিটি করপোরেশনে দাপ্তরিক কাজের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। ব্যস্ততা কম থাকায় অনেকেই অলস সময় কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরী খালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চলছিল। সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা অপসারিত হওয়ার পর থেকে ওই খালের পরিচ্ছন্নতা কাজটি বন্ধ আছে। সিটি তত্ত্ব্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আজম আলী সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সিটির কার্যক্রমের গতি মন্থর হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের বিরুদ্ধে হত্যাসহ দুটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের আওয়ামী ঘরানার অধিকাংশ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে হত্যা মামলা হয়েছে। প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হতে পারেন এমন আশঙ্কায় তাদের অনেকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গোটা সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে।
নগরীর কট্কিপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী তন্ময় মোহন্ত তার দাদির মৃতু্যসনদ নিতে রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অফিসে একাধিকবার গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। এতে তিনি দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। ওই ওয়ার্ডের মতো আওয়ামী ঘরানার কাউন্সিলর ওয়ার্ড কার্যালয়গুলোতে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস বন্ধ পাওয়া গেছে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম মহানগর কোতয়ালী থানা শাখার আওয়ামী লীগ সভাপতি হওয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। এই ওয়ার্ডের মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল ওহাব বলেন, তার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনুপস্থিতিতে নানা ধরনের বিড়ম্বনা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি সনদপত্র প্রত্যায়নপত্র নানা কারণে আটকে আছে। তার মতো অনেকেই এমন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে আওয়ামী ঘরানার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন।
রংপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় আওয়ামী ঘরানার অধিকাংশ কাউন্সিলরের অনুপস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, নাগরিক সেবার বিষয়টি মাথায় রেখে ওই ওয়ার্ডগুলোতে সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরদের দিয়ে কার্যক্রম চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ও রসিক প্রশাসকের মামলা প্রসঙ্গে বলেন, তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাটি রুজু করা হয়েছে। তিনি কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতির বিষয়ে বলেন, পর পর ৩ বার মাসিক সভায় অনুপস্থিত থাকলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। নোটিশের জবাব সঠিক না হলে ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার এবং সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, সবেমাত্র সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিয়েছি। সব কার্যক্রম বোঝার চেষ্টা করছি। কাজের চাপের কারণে তিনি সময় দিতে পারছেন না বলে জানান তিনি। তবে তিনি বিভাগীয় কার্যালয়ে বসে সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন বলে জানান। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ দুটি মামলা হয়েছে শুনেছেন বলে জানান।