রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ কিলোমিটার
বন্যায় প্রায় আট হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতি
প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
দেশের উত্তর পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলে বন্যায় সড়ক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য মিলেছে সরকারের প্রাথমিক হিসাবে। এই হিসাবে ৭ হাজার ৭২২ কিলোমিটার সড়ক এবং ১ হাজার ১০১টি সেতু ও কালভার্টের হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ত্বরিত মেরামতের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এতে বলা হয়েছে, 'এ পর্যন্ত এলজিইডি কর্তৃক মেরামত করা হয়েছে ৫১ কিলোমিটার রাস্তা এবং ৯৬টি ব্রিজ ও কালভার্ট।'
উজানের তীব্র ঢল এবং অতি ভারী বৃষ্টির কারণে গত ২০ আগস্ট থেকে ফেনী, কুমিলস্না, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্ণীপুর ও কক্সবাজারে বন্যা দেখা দেয়।
৯ দিনে ১১ জেলার মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ জনে, তার মধ্যে ফেনীরই সবচেয়ে বেশি ১৭ জন। এসব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৫ লাখের বেশি।
তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, বন্যাদুর্গত এলাকায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিভাগের অধীন সব দপ্তর, সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান।
তথ্য বিবরণীতে লেখা হয়, বন্যা উপদ্রম্নত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
২৯ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত দুর্গত ১১টি জেলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার পরিশোধন ট্যাবলেট, ২৩ হাজার ৯২৭টি জেরিকেন এবং ইউনিসেফের সহায়তায় ৪ হাজার ১৩৭টি হাইজিন কীট বিতরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বন্যা উপদ্রম্নত এলাকায় ৬৩ হাজার ২৭৪ জনকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
উদ্ধার করা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩২৮ জন মানুষ এবং আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩২০ জনকে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
সারাদেশে ৮টি (ফেনী ৫টি, মৌলভীবাজার, নোয়াখালী ও কুমিলস্নায় একটি করে) মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পস্ন্যান্টের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭০ হাজার ৫০৫ লিটার নিরাপদ খাবার পানি বিতরণ করেছে।
রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ কিলোমিটার
এদিকে, বন্যার কারণে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চারদিন বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। পানিতে বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার রেলপথ ডুবে যায়। এ রেলপথের তিন রুটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩ কিলোমিটার এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ মেরামত করতে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা লাগবে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশলীরা।
তারা বলেন, বন্যার কারণে ৫৬ কিলোমিটার রেলপথ পানিতে ডুবে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথের ফাজিলপুর থেকে কালীদহ হয়ে ফেনী পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রেলপথ। এই ৭ কিলোমিটার রেলপথ পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, লাকসাম-নোয়াখালী রুটে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার রেলপথ পানিতে ডুবেছিল। এর মধ্যে লাকসাম-নোয়াখালী ৪৯ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার রেলপথ এখনো পানির নিচে রয়েছে। সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এক লাইনে ট্রেন চলাচল করছে। অন্য লাইনটি মেরামত করা হচ্ছে। যার কারণে বন্ধ রয়েছে এ রুটের ১৫টি ট্রেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ রাফি মো. ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথের ফেনীর মুহুরীগঞ্জ থেকে গুণবতী পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার রেলপথ ডুবেছিল। এর মধ্যে ফাজিলপুর-কালীদহ হয়ে ফেনী পর্যন্ত (চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী লাইন) সাড়ে ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার রেললাইন পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। এই রেল লাইনটি চারদিন পানির নিচে ডুবেছিল। রেল লাইনের পাথর-স্স্নিপারসহ প্রায়ই নষ্ট হয়েছে। এই ৭ কিলোমিটার রেললাইন আবার তৈরি করতে হবে। তবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী রেলপথটি ভালো আছে। এটার তেমন ক্ষতি হয়নি। ফাজিলপুর-কালীদহ হয়ে ফেনী পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ মেরামতে ৩ কোটি টাকার মতো লাগবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের মধ্যে জানালীহাট, পটিয়া ও কাঞ্চননগর এলাকায় প্রায় ১ কিলোমিটার রেললাইন পানিতে ডুবেছিল। এই রেললাইনে ক্ষতি হয়েছে। ষোলশহর-নাজিরহাট রুটে নাজিরহাটের শেষের দিকে ৫ কিলোমিটার রেললাইন পানিতে ডুবেছিল। এটা পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া এসব রেলপথের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। লাকসাম-নোয়াখালী ৪৯ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পানিতে ডুবে ছিল ১৫ কিলোমিটার। পানিতে ডুবে থাকার কারণে এই রেললাইনের ক্ষয়ক্ষতি এখনো নির্ধারণ করা যায়নি।
বন্যার পানিতে ফেনীর ফাজিলপুর এলাকায় রেলপথ ডুবে যাওয়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। চারদিন বন্ধ থাকার পর গত ২৬ আগস্ট রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামে সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পরদিন ২৭ আগস্ট থেকে স্বাভাবিক সূচি অনুযায়ী সব ট্রেন চলতে থাকে। পরে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হলে গত ২২ আগস্ট থেকে তিন দিন বন্ধ ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের ট্রেন চলাচল। তিন দিন পর গত ২৪ আগস্ট কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
এ রুটের বিভিন্ন স্থানে এখনো পানি জমে থাকায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতের কাজ চলমান থাকায় একটি লাইন বন্ধ রয়েছে। যার কারণে এ রুটে বন্ধ রয়েছে ১৫টি ট্রেন চলাচল।