গাজী টায়ারস কান্ড
বেজমেন্টে পৌঁছায়নি আগুন পাওয়া যায়নি ভিকটিমও
প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারস কারখানার পুড়ে যাওয়া ছয়তলা ভবনের বেজমেন্টে আগুন পৌঁছায়নি, সেখানে 'ভিকটিম' কাউকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে উদ্ধার অভিযান চালানো 'খুবই বিপজ্জনক' বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ভবনটির বেজমেন্টে ঢুকে অনুসন্ধান চালানোর পর নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, 'ভবনটিতে একটি বেজমেন্ট রয়েছে বলে একটি তথ্য আমাদের কাছে ছিল সেখানে কেউ আটকা পড়েছিলেন কিনা সেটা দেখতে দুপুর ১২টার দিকে একটি দল অনুসন্ধান চালায়। বেজমেন্টে আগুন পৌঁছায়নি, জায়গাটিতে যেসব মেশিনপত্র ছিল সেগুলোও অক্ষত রয়েছে অনুসন্ধানে সেখানে কোনো ভিকটিম পাওয়া যায়নি।'
ফায়ার সার্ভিসের দলটি যখন বেজমেন্টে অনুসন্ধান চালায় তখনো নিচতলার কয়েকটি স্থানে অল্প আগুন জ্বলছিল বলে জানান তিনি। ভবনটির ব্যাপারে কী করা হবে এবং কোন উপায়ে উদ্ধার অভিযান চালানো যাবে; এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান?
এর আগে এদিন সকালে কারখানায় ঢুকে উদ্ধার অভিযান চালানো 'খুবই বিপজ্জনক' বলে জানায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের আহ্বানে সকাল ৯টায় বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের বিশেষজ্ঞ দল ভবনটি পরিদর্শনে আসেন। তারা ভবনটির চারপাশ ঘুরে দেখেন এবং ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহসান সাংবাদিকদের বলেন, 'ভবনের চারপাশ ঘুরে এবং ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডারের (মই) সাহায্যে যতটা সম্ভব দেখেছি? এছাড়া ড্রোনের সাহায্যে ধারণ করা ভিডিও, ছবি পর্যবেক্ষণ করেছি আগুনটা আসলে অনেকক্ষণ সময় ধরে, প্রায় তিন দিনের মতো জ্বলেছে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল থাকায় তাপও অনেক বেশি হয়েছে যা ভবনটির অবস্থা দেখলে বোঝা যায়। ভবনটি শুধু পুড়ে যায়নি, পুড়ে ভেঙে বেরিয়ে গেছে রডগুলো।'
এছাড়া ছয়তলা ভবনটির চতুর্থ ও পঞ্চম তলার মেঝে ভেঙে তৃতীয় তলার মেঝেতে পড়ে গেছে। ভাঙা অংশগুলোর ওজনে তৃতীয় তলাও বেঁকে গেছে বলে জানান বুয়েটের এই অধ্যাপক।?
তিনি বলেন, 'কলামগুলো বেশিরভাগ ফেটে গেছে; এ ফাটলটা আমরা বাইরে থেকে যতটা দেখতে পাই, আগুন লাগার ফলে ভেতরটাতেও ততটাই ফাটল থাকে। উপরের দিকে আগুন বেশি জ্বলায় সেখানে ক্ষতি বেশি হয়েছে। এখন নিচের দিকে উদ্ধার অভিযান চালানোর চেষ্টা করা হলে উপর থেকে ভেঙে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে'।
তিনি বলেন, 'সবকিছু বিবেচনায় এনে ভেতরে ঢুকে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোটা খুবই বিপজ্জনক।'
পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে এ প্রকৌশলী বলেন, 'রাজধানীর বিজয় সরণিতের্ যাংগস ভবন যখন ভাঙে তখনো আমরা বুয়েটের টিম গিয়েছিলাম, সেখানে যে অবস্থা ছিল, তার থেকে বিপজ্জনক অবস্থা এখানে;?যার ফলে একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের হিসেবে যা বুঝতে পারছি এখানে উদ্ধার অভিযান চালানো খুবই বিপজ্জনক। পরবর্তীতে যখন ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে সেটিও অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক করতে হবে।? যাতে ভাঙার সময় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।'
সকালে বুয়েটের দলের পরিদর্শনের পর বেলা ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রতিটি ফ্লোরের রড বের হয়ে গেছে, কলাম ফুলে গেছে, বিম বাঁকা হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ভবনের ভেতর প্রবেশ করে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ চালানোর সুযোগ নেই।'
সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী গত রোববার ভোরে গ্রেপ্তারের পর দুপুর থেকে তার মালিকানাধীন গাজী টায়ারসের কারখানাটিতে লুটপাট চালায় আশপাশের শত শত মানুষ। পরে রাতে তারা কারখানার মূল ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে জ্বলে সেই আগুন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করছেন তাদের স্বজনরা। প্রতিদিনই নিখোঁজদের খোঁজে কারাখানা চত্বরে ভিড় করছেন তারা।