চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয় গত বছরের ১৪ নভেম্বর। উদ্বোধনের ৯ মাস পর পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চলাচল করছে প্রাইভেট কার আর মাইক্রোবাস। এক্ষেত্রে চলাচল করা গাড়িগুলোর থেকে এখন নেওয়া হচ্ছে না কোনো টোল। তবে আপাতত চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। পূর্ণাঙ্গভাবে কবে নাগাদ এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, নগরের লালখান বাজার থেকে গাড়ি ওঠার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর পতেঙ্গা থেকে ওঠা গাড়ি নামছে টাইগারপাসে। অন্যদিকে, পতেঙ্গাপ্রান্তে গাড়ি ওঠানামা করছে। প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস চলাচলের সুযোগ থাকলেও মোটর সাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরাও এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে চান। তবে তাদের এক্সপ্রেসওয়ে উঠতে দিচ্ছেন না নিরাপত্তা প্রহরীরা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি পুরোপুরি চালু হলে টোল দিয়েই যানবাহন চলাচল করতে পারবে। অনুমোদিত টোলের যে হার নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে প্রাইভেট কার ১০০ টাকা, জিপ ১০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ৩০০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল, ভারী ট্রাক (৬ চাকা) এবং কাভার্ড ভ্যান চলাচল করতে পারবে না বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ ব্যয় ৪ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোতে ৩৯৪টি পিলার রয়েছে। নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন ওঠা-নামার জন্য ১৫টির্ যাম্প নির্মাণের কাজ চলছে। বর্তমানে প্রকল্পের ১৩টির্ যাম্প ব্যতীত মূল এক্সপ্রেসওয়ে ও ২টির্ যাম্প যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন এক্সপ্রেসওয়েতে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলছে। গাড়ি চলাচলে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি কোনো সমস্যা পাওয়া যায়, তাহলে বিশেষজ্ঞ পরামর্শকদের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা নিয়ে কাজ করা হবে।'
টোলের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'টোল প্রদান করে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে হবে। মন্ত্রণালয় যখন অনুমোদন দেবে, তখন পূর্ণাঙ্গভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হবে।'
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম নগরীর মূল শহর থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। কিন্তু এই দূরত্ব অতিক্রম করতে বর্তমানে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। বন্দর ইপিজেড কেন্দ্রিক যানজটের কারণে কখনো কখনো এই দূরত্ব অতিক্রমে ২ থেকে ৩ ঘণ্টাও সময় লেগে যায়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি পুরোপুরি চালু হলে বছরের পর বছর এই দুর্ভোগ আর সময়ের অপচয় থেকে মুক্তি পাবে চট্টগ্রামের কোটি কোটি মানুষ। এছাড়া বিমানবন্দরে পৌঁছানো যাবে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই।