বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণের রাজনীতি যারা করে তাদের কখনো পালাতে হয় না। আমরা আছি, আমাদের পালাতে হবে না, এদেশের মাটিতেই আমার কবর হবে। আমরা জনগণের উপর নির্যাতন ও নিপীড়নের রাজনীতি করবো না, যা করলে পালিয়ে যেতে হয়। বাংলাদেশের জনগণ স্বৈরাচারদের যুগে যুগে এই শিক্ষা দিয়েছে যে, জনগণের ক্ষমতা জবর-দখল করলে তাকে পালিয়ে যেতে হয়।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে গণফোরামের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের দুই অংশ একত্রীকরণের বিষয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, 'টাকা-পয়সা দিয়ে ভোট কেনা যায় কিন্তু আস্থা অর্জন করা যায় না। আমরা সাময়িক সুবিধার জন্য রাজনীতি করি না। আমরা চাইলেই তথাকথিত মন্ত্রী হতে পারতাম কিন্তু সেটা করছি না। কারণ আমরা চাই, জনগণ সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার মালিক হোক।'
কামাল হোসেন বলেন, 'সুষ্ঠু রাজনীতি করতে হলে জনগণকে বোঝাতে হবে আপনারা দেশের পাহারাদার, আপনারা ভোটে অংশগ্রহণ করুন। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, তাদের বিতারিত করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'সুষ্ঠু রাজনীতি করার জন্য প্রতিজ্ঞা আমরা করেছিলাম। সে প্রতিজ্ঞা আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা কারও কাছে বিক্রি হইনি। এখানে যারা আছেন, তারা একজনও বিক্রি হননি। মানুষের আস্থা নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যাই, সে আস্থা যদি ধরে রাখতে না পারি তাহলে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবো না।'
ইমিরেটাস সভাপতি বলেন, 'অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান ধরে রাখতে পারবো কিনা, আমরা টাকা দিয়ে নির্বাচন করি নাই, আমরা ভোট কিনে নির্বাচিত হই না। টাকা দিয়ে ভোট কিনে ক্ষমতায় আসার পরে সেই টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয় কিন্তু এতসব করেও একটা সময় ঠিকই পালিয়ে যেতে হয়। দেশে কেন থাকতে পারে না? কারণ জনগণ জানে তাদের হাতে বিচার করার ক্ষমতা আছে।'
দেশ থেকে অবিশ্বাস্য রকমের টাকা পাচার করা হয়েছে জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, 'সেসব টাকা এই দেশের জনগণেরই সৃষ্টি। আমরা সেই বঞ্চিত মানুষের পাশে আছি। জনগণের রাজনীতি হলো জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করা।'
বিদেশে যারা টাকা পাচার করেছে তারা ভালো আছে কিন্তু দেশের মানুষের উন্নতি হয়নি উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'আমরা মানুষের উন্নতির জন্য রাজনীতি করছি। আমাদের লক্ষ্য, দেশের সম্পদ দেশেই রাখা এবং জনগণের উন্নতি করা।'
দেশের জনগণের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, 'আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় পাহারা দিতে হবে। এলাকার রাজনীতিবিদরা কী কাজ করছেন তার হিসাব নিতে হবে। ছাত্রসমাজ প্রমাণ করেছে, তারা কারও কাছে বিক্রি হয় নাই। তারা জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছে। তারা দেশ পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের মানুষ পরিশ্রম করে উৎপাদন বাড়াচ্ছে তবু সংকট কেন? আপনারা ঐক্যবদ্ধ হলেই দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারবো।'
অনুষ্ঠানে গণফোরামের শীর্ষ নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, 'আমরা আজ আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সব স্তরের রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করছি। দ্রম্নততম সময়ে ঐক্যবদ্ধ গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।'
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেন, ডা. মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ।