হাতিরঝিল থেকে লাশ উদ্ধার
ঢাকায় নারী সাংবাদিকের রহস্যজনক মৃতু্য!
প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকার হাতিরঝিল থেকে ভাসমান অবস্থায় বেসরকারি গাজী (জি) টেলিভিশনের সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর (৩২) লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় একটি অপমৃতু্যর মামলা দায়ের হয়েছে। যদিও নিহতের পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, সারাহর মৃতু্য অস্বাভাবিক। পুলিশ বলছে, ঘটনাটির তদন্তে পাওয়া তথ্য মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৭ আগস্ট মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাতিরঝিলের লেকের পানি থেকে ভাসমান অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন পথচারীরা। হাসপাতালে নেওয়া পথচারীদের একজন সাগর জানান, তিনি ওই নারীতে ঝিলের পানিতে ডুবে যেতে দেখেন। গভীর রাতে এক নারীকে ঝিলের পানিতে ডুবে যেতে দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। তিনি দ্রম্নত কোনো কিছু না ভেবেই ওই নারীর জীবন বাঁচাতে ঝিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অজ্ঞান অবস্থায় তিনি ওই নারীকে উদ্ধার করেন। দ্রম্নত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, মৃত ঘোষণার পর লাশ কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নিহতের পোর্টমর্টেম সম্পন্ন হয়।
হাতিরঝিল থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, সারাহ জি-টিভির নিউজরুম এডিটর ছিলেন। সুরহতাল শেষে নিহতের লাশ বুধবার বিকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতের পিতার নাম বখতিয়ার শিকদার। মায়ের নাম দিলদার বেগম চৌধুরী। বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী থানাধীন কৃষ্ণপুর গ্রামে। পরিবারটি একই জেলার সুধারাম থানাধীন ইসলামবাগ আবাসিক এলাকার ১৩৪ বাড়িতে বসবাস করত।
বর্তমানে পরিবারটি ঢাকার মিরপুর মডেল থানাধীন কল্যাণপুর নতুন বাজার এলাকার ২৩৪ নম্বর বাড়িতে বসবাস করছে।
ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন রাবিতা সারাহ (৩৭) বাদি হয়ে হাতিরঝিল থানায় একটি অপমৃতু্যর মামলা দায়ের করেছেন। সাংবাদিক নিহতের ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ঘটনার আগে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ফেসবুকে সারাহ একটি পোস্ট দেন। তাতে তিনি লিখেন, 'জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।' একই সময় ফাহিম ফয়সাল নামে এক যুবককে ট্যাগ করে তিনি আরও একটি পোস্ট দেন। তাতে লেখেন, 'তোমার মতো বন্ধু পেয়ে ভালো লাগল। আলস্নাহ তোমার মঙ্গল করুন। আশা করি, শিগগিরই তোমার সব স্বপ্ন পূরণ হবে। আমাদের অনেক পরিকল্পনা ছিল। দুঃখিত, পরিকল্পনাগুলো পূরণ করতে পারছি না। তোমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আলস্নাহর রহমত করুক।' ওই পোস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কপালে পতাকা বাঁধা কয়েকটি ছবিও পোস্ট করেন সারাহ।
এদিকে মঙ্গলবার রাতেই খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান সায়েদ শুভ্র নামের একজন। তিনি নিজেকে সারাহর স্বামী দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, প্রেমের সম্পর্কের সূত্রধরে সাত বছর আগে দুই পরিবারের অমতে তাদের বিয়ে হয়। তারা আলাদা বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি তাদের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। তারা পরস্পর আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথক হওয়ার আইনি কার্যক্রম শেষ করতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে বাসার ভাড়া পাঠিয়ে দেন। পরে তিনি সারাহকে ফোন করেন। সারাহ বলে রাতে বাসায় ফিরতে পারবে না। ব্যস্ত থাকার কথা জানিয়ে সারাহ ফোন রেখে দেয়। রাত ৩টার দিকে সারাহ হাতিরঝিলের লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে বলে খবর পান। পরে হাসপাতালে এসে সারাহকে মৃত দেখতে পাই।