পুলিশের কেনাকাটায় সীমাহীন নয়ছয়
নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিন্ডিকেট টাকা দিয়েই বন্ধ করা হয়েছে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম সাত বছরেও তদন্ত হয়নি চারশ' কোটি টাকার দুর্নীতি
প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
গাফফার খান চৌধুরী
শেখ হাসিনা সরকারের আমলের দুটি অর্থবছরে পুলিশের কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কেনাকাটার নামে হরিলুট করা হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করে। বিষয়টির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার পাশাপাশি মূল অভিযুক্ত ও হরিলুটের মাস্টারমাইন্ড অ্যাডিশনাল ডিআইজি রেজাউল করিমকে ওই সময় পদোন্নতি দিয়ে ডিআইজি করা হয়। অদ্যাবধি সেই তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ ও ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে পুলিশ সদস্যদের পোশাকসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনাকাটায় রীতিমতো হরিলুটের ঘটনা ঘটে। প্রায় চারশ' কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থার প্রতিবেদনে ওঠে আসে। রাষ্ট্রীয় ওই সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে অবহিত করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১৭ সালের ২৭ মে একটি নির্দেশনা পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
আদেশে বলা হয়, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (লজিস্টিক) রেজাউল করিমের দুর্নীতির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এসেছে। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার সিন্ডিকেটের অনুগত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব (পুলিশ-২) মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ জুন ওই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অপর সদস্য হিসেবে একজন অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার প্রতিনিধির নাম পাঠাতে পুলিশ সদর দপ্তরকে পত্র দেওয়া হয়। ১৪ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য দিনক্ষণ বেঁধে দেওয়া হয় সেই চিঠিতে।
অথচ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দীর্ঘ আট মাসেও কোনো প্রতিনিধি দেওয়া হয়নি। যার নেপথ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই। কারণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করা কোনো পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তার কারণেই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে কারও নাম পাঠানো হয়নি। যেটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানতেন। মূলত তার কারসাজিতেই তদন্ত কার্যক্রম হিমাগারে চলে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ বা হস্তক্ষেপের কারণে পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল করিমের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুলিশ বাহিনীর মধ্যমসারির কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। যদিও এমন অসন্তোষ কোনো আমলেই আসেনি। যারাই এসব বিষয়ে নাক গলিয়েছেন, তাদেরই শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। এতে করে রেজাউল করিমের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হয়। তিনি বহাল থেকে সম্মিলিতভাবে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেন। এরপর শুরু হয় তার নজিরবিহীন দুর্নীতি। তার নিজস্ব ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকৃতমূল্যের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি মূল্যে মালামাল কেনাকাটা করতে থাকেন। এতে সমর্থন যুগিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পুলিশের তৎকালীন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তরের ক্রয় বিভাগে (সাপস্নাই) ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন পুলিশ সুপার মো. সরওয়ার। তিনি অ্যাডিশনাল ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর বদলি হয়ে যান। তার জায়গায় পদায়ন করা হয় সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (পুলিশ সুপার) রেজাউল করিমকে। সিন্ডিকেটের আর্শীবাদপুষ্ট হওয়ায় ইকু্যইপমেন্ট বা যন্ত্রপাতির মালামাল কেনাকাটায় একজন এআইজি (পুলিশ সুপার) নিযুক্ত থাকার পরও তিনি বিশেষ ক্ষমতাবলে ওই শাখারও কেনাকাটার দায়িত্ব নিয়ে নেন। তিনি সাপস্নাই শাখার মালামাল কেনার পাশাপাশি ইকু্যইপমেন্ট শাখারও মালামাল কেনার দায়িত্ব হস্তগত করেন।
প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, সাপস্নাই শাখার কেনাকাটায় শুধুমাত্র পুলিশ বাহিনীর ইউনিফর্ম যেমন-কাপড়, জুতা, মোজা, জুতার কালিসহ বিভিন্ন মালামাল ক্রয় করা হয়। ইকু্যইপমেন্ট শাখা থেকে হেলমেট, পুলিশ বাটন, রায়টসেইল্ড, ট্রাফিক সিগনাল লাইট, মাল্টিপারপাস বেল্টসহ নানা ধরনের মালামাল কেনা হয়। তিনি ২০১৬-২০১৭ ও ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে দুই মেয়াদে কেনাকাটা করেন। তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশের বিভিন্ন মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানা অজুহাতে কালো তালিকাভুক্ত করেন। কালো তালিকাভুক্ত করার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মদদে ওইসব প্রতিষ্ঠানের সবাইকে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। শুরু হয় পুলিশের মালামাল কেনার নামে লুটপাট।
প্রতিবেদন মোতাবেক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার বাহিনীসহ এ জাতীয় সংস্থার হেলমেট কেনা হয় এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পুলিশ বাহিনীর হেলমেট কেনা হয় প্রতিটি এক হাজার ৪৮০ টাকা দরে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা হয় এক হাজার ৮০০ টাকা দরে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সাবেক এআইজি হারুনর রশীদ (ইকু্যইপমেন্ট) জেরিন টেক্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক হাজার ৫০০ পিস ভিআইপি হেলমেট কেনেন এক হাজার ৬৮৭ টাকা দরে।
অথচ একই মানের হেলমেট রেজাউল করিম সাপস্নাই শাখার মাধ্যমে তার দুই অর্থবছরে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিটি ৯ হাজার ৪২৯ টাকা দরে কেনেন। প্রতিটি হেলমেট সাদ হাজার ৬২৯ টাকা বেশি দামে কিনেন তিনি। দুই অর্থবছরে প্রায় ৪০ হাজার হেলমেট কেনার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা লুটপাট হয়। আর একইমানের বেশ কিছু ভিআইপি হেলমেট দুই অর্থবছরে কেনা হয়েছে। যার প্রতিটি দাম ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৯০০ টাকা।
পুলিশ বাহিনীর কাপড়, জুতা, গ্রাউন্ডশিট, মোজা, মাল্টিপারপাস বেল্ট এবং হেলমেটসহ সব ধরনের মালামাল রেজাউল করিমের দুই অর্থবছরে তারই মনোনীত প্রতিষ্ঠান জেরিন টেক্স, ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, লাবিন ইন্টারন্যাশনাল, মাল্টিট্রেড, লিথী এন্টারপ্রাইজ এবং বেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্সসহ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কেনা হয়েছে। এভাবেই বিপুল অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। দুই অর্থবছরের সাপস্নাই শাখার ৯০ ভাগ কাজই পাইয়ে দেওয়া হয়েছে তার পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
আগের এআইজি (সাপস্নাই/লজিস্টিক) সু্য-পালিস কিনেন প্রতিটি ৩২ টাকা দরে। কিন্তু রেজাউল করিমের দুই অর্থবছরের সময় কেনা হয়েছে প্রতিটি ৬৯ টাকা দরে। দুই অর্থবছরে রেজাউল করিম প্রায় ১০ লাখ পিস সু্য-পালিস কিনেছেন। আগে প্রতি পিস ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট ৭০০ টাকা দরে কেনা হলেও রেজাউল করিমের সময় কেনা হয় প্রতিটি তিন হাজার ৫০০ টাকা দরে। এই দামে ১০ হাজার পিস লাইট কেনা হয়েছে। আগে প্রতি জোড়া মোজা কেনা হয়েছে ৩০ টাকা দরে। একই মোজা রেজাউল করিম কিনেন ৯৫ টাকা দরে। এভাবে ১০ লাখ জোড়া (পিস) মোজা কেনা হয়েছে।
আগে ক্যানভাস সু্য কেনা হয়েছে ৫০০ টাকা দরে। রেজাউল করিমের সময় দুই অর্থবছরে এক হাজার ২৫০ টাকা করে কিনেছেন। আগে প্রতি জোড়া বুট জুতা কেনা হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা দরে। রেজাউল করিম কিনেছেন দুই হাজার ৪০০ টাকা ধরে। রেজাউল করিমের দুই অর্থবছরে প্রায় চার লাখ জোড়া বুট ক্রয় করা হয়েছে। আগে গ্যাস মাস্ক কেনা হয়েছে সাত হাজার ২১৯ টাকা দরে। রেজাউল করিমের দুই অর্থবছরে কেনা হয়েছে সাড়ে ২৪ হাজার টাকা দরে। যা তিনগুণের চেয়েও বেশি।
আগে পুলিশ সদর দপ্তরের (সাপস্নাই/লজিস্টিক) বিভাগ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পুলিশের সব ধরনের কাপড় গড়ে প্রতি মিটার ১৮০-১৯০ টাকা দরে কেনা হতো। পরে পুলিশ সুপার রেজাউল করিম এর চেয়েও নিম্নমানের কাপড় কিনেছেন প্রতি মিটার ৩৯০ টাকা দরে। যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। রেজাউল করিম দুই অর্থবছরে প্রায় ৪০ লাখ মিটার কাপড় কেনেন।
গ্রাউন্ডশিট কেনার ক্ষেত্রে রীতিমতো তেলেসমাতি দেখিয়েছেন রেজাউল করিম। তিনি রাতের অন্ধকারে রিজার্ভ স্টোরে সব মালামাল জমা রাখতেন। গ্রাউন্ডশিট গ্রহণ কমিটি পরিদর্শনে গেলে অল্প কিছু রেখে বাকিগুলো আসছে বলে বিল তুলে নিতেন। মালামাল গ্রহণ কমিটিকে ভালোমানের জিনিসপত্র কেনার কথা বলা হতো। অথচ পরে নিম্নমানের মালামাল কেনা হতো। এ ক্ষেত্রে মালামাল গ্রহণ কমিটিও বাড়তি অনৈতিক সুবিধা পেয়েছে রেজাউল করিমের মাধ্যমে।
পুলিশের মাল্টিপারপাস বেল্ট এবং ওয়েভ বেল্ট সরবরাহের ক্ষেত্রে দরপত্র অনুযায়ী নায়লনের বেল্ট এবং পিতলের ওপর নিকেলের (এস/এস) বাকল সরবরাহ করার কথা। কিন্তু নায়লনের পরিবর্তে পিপিআর দিয়ে বেল্ট তৈরি করে এবং এসএস- এর পরিবর্তে নিম্নমানের লোহার বাকল সরবরাহ করা হয়েছে। একই কৌশলে পুলিশ বাটন, রিফ্লেকটিভ ভেস্ট, হুইসেল, বুলেট প্রম্নফ বেলাস্টিক সেইলর্ড লেভেল ৩-এ, লাইফ জ্যাকেটসহ অসংখ্য নিম্নমানের মালামাল তার মনোনীত প্রতিষ্ঠান কিনে অর্থ হরিলুট করা হয়েছে। পুলিশ স্টোরের জন্য কার্টুন, বস্তা, কস্টেপ, রশি, দা, শাবল, বেলচা ক্রয়ের নামে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ওসিসি ফান্ড থেকে লাখ লাখ টাকার খরচ দেখানো হয়েছে। রেজাউল করিমের আগে এমন কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
সূত্র মতে, পুলিশের টেন্ডার প্রকাশের আগে দেশের সব জেলা থেকে মালামালের চাহিদা নিয়ে দরপত্রের আহ্বান করার নিয়ম। সব মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরপত্রে পরিমাণ নির্ধারণ করা থাকে। তবে পুলিশের জরুরি কোনো প্রয়োজনে দরপত্রের চেয়ে অধিক মালামালের প্রয়োজন হলে, তা পিপিআর ২০০৬ ও ২০০৮-এর ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ শতকরা ১৫ ভাগ অতিরিক্ত ক্রয়াদেশ প্রদান করার নিয়ম আছে। অন্যথায় পুনরায় টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিনতে হয়।
কিন্তু রেজাউল করিম জরুরি প্রয়োজন দেখিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পিপিআর নীতিমালা না মেনেই, নিজের ইচ্ছামতো অনেক মালামাল কিনেছেন। এসব ক্রয় সম্পন্ন করা হয়েছে তারই মনোনীত ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান থেকে। তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান যেসব মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছে, সেগুলোকে পুনরায় শতভাগ অতিরিক্ত কার্যাদেশ প্রদান করেছেন। যা পিপিআর অনুযায়ী আইন বহির্ভূত। রেজাউল করিম উচ্চমূল্যে মালামাল কেনার পাশাপাশি নকল ও ভুয়া কার্যাদেশের মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সূত্র বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছয় কোটি টাকার হেলমেট কেনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র দরপত্রে অংশ নিতে পারবে। দেশে একক কোনো প্রতিষ্ঠানের এমন অভিজ্ঞতা নেই। রেজাউল করিমের মনোনীত প্রতিষ্ঠান সেই সনদ দাখিল করে। পরে ওই সনদ ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। রেজাউল করিমের মনোনীত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জেরিন টেক্স, ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, লাবিন ইন্টারন্যাশনাল, মাল্টিট্রেড, লিথী এন্টারপ্রাইজ এবং বেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্সসহ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ হরিলুটের ঘটনাটি ঘটানো হয়। যা ছিল সিন্ডিকেটের পূর্বপরিকল্পিত। সব মিলিয়ে পুলিশের মালামাল কেনায় রেজাউল করিমের দুই অর্থবছরেই প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় একপর্যায়ে পারিবারিক সম্পর্কে পরিণত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত ডিআইজি রেজাউল করিম এবং তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ সপরিবারে বিদেশ ভ্রমণ করতেন একত্রে। পরিবার দুটি সৌদি আরব, কোরিয়া, চায়নাসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছে।
সূত্র বলছে, পুরো প্রক্রিয়াটির নেপথ্যে ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বাধীন অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় রাষ্ট্রের অর্থ এভাবেই হরিলুট হয়েছে।
মূলত দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করা হয়েছে তদন্তের সঙ্গে জড়িত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ সবার। যে কারণে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পরও ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। উপরন্ত রেজাউল করিমকে অ্যাডিশনাল ডিআইজি থেকে পদোন্নতি দিয়ে ডিআইজি করে বদলি করা হয়। এ ব্যাপারে তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বে থাকা এ কে এম শহীদুল হক, তদন্ত কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।