এনায়েতপুরে ১৩ পুলিশ হত্যা মামলায় আসামি ৬ হাজার

প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

এনায়েতপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ ১৩ পুলিশকে হত্যার ঘটনায় থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এই হামলায় এনায়েতপুর থানায় চার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উলেস্নখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, গত ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টায় এনায়েতপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে চার আওয়ামী লীগ নেতার নাম উলেস্নখ এবং অজ্ঞাতনামা ছয় হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছেন। পুলিশ সুপার আরও জানান, এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ ১৩ পুলিশ হত্যা মামলায় থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বিএসসি, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুলস্নুক চাঁন, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূইয়ার নাম উলেস্নখসহ অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামিদের দ্রম্নত গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রম্নয়ারি গ্রেপ্তার করা এক আসামিকে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু সেই আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেন। পুলিশ ওই দাবি মেনে নেয়নি। তার অবৈধ দাবি মেনে না নেওয়ায় পুলিশের ওপর তার ক্ষোভ ছিল। পরে ওই আসামির বিরুদ্ধে মামলাও নেয় পুলিশ। পরে বাচ্চুর নেতৃত্বে ৪৫০-৫০০ জন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী থানা ঘেরাও করে। সে সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাককে অপসারণের দাবিও করেছিলেন তিনি। পরে আসামিরা এনায়েতপুর থানা পুলিশের ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। গত ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ড মাইক দিয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। ওসি রাজ্জাক বলেন, 'এই থানা সাধারণ জনগণের। আপনারা থানার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করবেন না।' এ কথায় ছাত্র-জনতা চলে যায়। পরে এক নম্বর আসামি আলহাজ আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এজাহার নামীয় আসামিসহ পাঁচ থেকে ছয় হাজার দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা চালায়। আত্মরক্ষায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। আসামিরা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দেখে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আসামিরা থানা কম্পাউন্ডে উপ-পরিদর্শক (এসআই) তহছেনুজ্জামান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আরিফুল আজম, রবিউল আলম শাহ, হাফিজুল ইসলাম, শাহিন, রিয়াজুল ইসলামকে পিটিয়ে ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। একপর্যায়ে আসামিরা থানা ভবন ধ্বংস ও জীবিত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দশে ভেতরে ঢুকে যায়। পুলিশের ও জনসাধারণের জমা দেওয়া বেসরকারি অস্ত্র ও গুলি লুট করে। পরে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে থানার ভেতর ও বাইরে থাকা অফিসার ও ফোর্সকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই আনিছুর রহমান, এসআই রহিজ উদ্দিন খান, এসআই প্রণবেশ কুমার বিশ্বাস, কনস্টেবল আব্দুল সালেক, কনস্টেবল হানিফ আলী থানার পাশে বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আসামিরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। তাদেরও সেখানে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ সয়ম নারী কনস্টেবল রেহেনা পারভীনকে মারধর করে টানা হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি করে। পরে বিকালে সেনাবাহিনীর একটি দল থানা এলাকায় পৌঁছে নিহত পুলিশ সদস্যদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। আসামিরা পাঁচটি পিস্তল ও আটটি ম্যাগাজিন, একটি চায়না পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিন, চারটি চায়না রাইফেল ও ৩৭টি চার্জার, দুটি চায়না রাইফেল টাইপ ও দুটি ম্যাগাজিন, ছয়টি ১২ বোর শটগান, একটি ৩৮ মিমি গ্যাসগান লঞ্চার, ৭.৬২/৩৯ মিমি গুলি ১৬৮ রাউন্ড, ৭.৬২/২৫ মিমি গুলি ১৬ রাউন্ড, ৯/১৯ মিমি গুলি ৬০ রাউন্ড, ১২ রোব শর্টগান (রাবার কার্তুজ) ২২৭ রাউন্ড, ১২ রোব শটগান (লেটবল কার্তুজ) ৩৫৯ রাউন্ড, লং রেঞ্জ গ্যাস শেল ৩৮ রাউন্ড এবং শর্ট রেঞ্জ গ্যাস শেল ৩৬ রাউন্ড লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া আসামিরা একটি ডাবল কেবিন ও একটি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ ভ্যান, পুলিশ সদস্যদের ১৫টি মোটর সাইকেল ও একটি ট্রাক, বিভিন্ন সময় আটক করা নতুন-পুরাতন ১২টি মোটর সাইকেল ও থানার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ওয়াকিটকি পুড়িয়ে দেয়। এতে এনায়েতপুর থানায় চার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উলেস্নখ করা হয়েছে।