ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হলো পুলিশ সুপার মর্যাদার ৪৮ কর্মকর্তা বদলি

ডিএমপির শীর্ষ পদে আরও রদবদল

প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের শীর্ষ পদে আবারো বদল এসেছে। দুজন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং ছয়জন উপপুলিশ মহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) নতুন দায়িত্ব দিয়ে মঙ্গলবার আদেশ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এতদিন ঢাকা মহানগর পুলিশে দায়িত্বরত এই কর্মকর্তাদের সাতজনই সম্প্রতি সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) হিসাবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত। ডিআইজি থেকে পদোন্নতি পেয়ে সংখ্যাতিরিক্ত অতিরিক্ত আইজি হওয়া দুই কর্মকর্তার মধ্যে এ কে এম হাফিজ আক্তারকে শিল্পাঞ্চল পুলিশে এবং খ. মহিদ উদ্দিনকে টুরিস্ট পুলিশে পাঠানো হয়েছে, যে পদ দুটি ডিআইজির্ যাংকের। ডিআইজি মো. মুনিবুর রহমানকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে এপিবিএন সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। পদোন্নতি পেয়ে সংখ্যাতিরিক্ত ডিআইজি হওয়া বাকি পাঁচ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার করে ঢাকা মহানগর পুলিশেই রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হলো এদিকে, পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তিন কর্মকর্তাকে মঙ্গলবার অবসরে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কৃষ্ণ পদ রায়, খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার (উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদা) মো. মোজাম্মেল হক ও কেএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক) সরদার রকিবুল ইসলাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনটি প্রজ্ঞাপনের ভাষা একই রকম। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর (২০১৮ সালের ৫৭ নম্বর আইন) ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী, জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে কৃষ্ণ পদ রায়, মো. মোজাম্মেল হক ও সরদার রকিবুল ইসলামকে অবসর দেওয়া হলো। প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, অবসরে যাওয়া তিনজনই অবসরজনিত ভাতা প্রাপ্য হবেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ২২ আগস্ট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া, শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মাহাবুবর রহমান ও পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জয়দেব কুমার ভদ্রকে অবসরে পাঠানো হয়। উলেস্নখ্য, ১৩ আগস্ট পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে মোহাম্মদ আলী মিয়াকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল। ২১ আগস্ট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. আতিকুল ইসলাম, সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক-সুপারনিউমারারি) মো. আনোয়ার হোসেন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামানকে (উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার) অবসরে পাঠানো হয়। ১৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আরেক প্রজ্ঞাপনে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এসবি-বিশেষ শাখা) মনিরুল ইসলামকে এসবি থেকে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল। আর হাবিবুর রহমানকে ৭ আগস্ট ডিএমপি কমিশনারের পদ থেকে বদলি করে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল। ওই দিনই তাদের দুজনকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই দুপুরে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ (২২)। তিনি ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। সাঈদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ওই সময় দায়িত্বে থাকা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান এবং পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক মো. আবদুল বাতেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ১৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দিয়েছিল। ৪৮ কর্মকর্তা বদলি: এদিকে, সরকার পতনের পর পুলিশ বাহিনীতে বড় রদবদলের ধারাবাহিকতায় পুলিশ সুপার (এসপি) মর্যাদার ৪৮ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪ এসপিকে জেলা পুলিশের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে অন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা ২৪ কর্মকর্তাকে পুলিশ সুপার করে পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন জেলায়, যাদের ১৩ জনই সম্প্রতি পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মাহাবুর রহমান শেখ স্বাক্ষরিত দুই প্রজ্ঞাপনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।