রাজধানীর সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধসহ কয়েকটি দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পায়ে চালিত রিকশার চালকরা। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকশ চালক রিকশা নিয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় রাজধানীর ব্যস্ত এই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১২টার পর তারা শাহবাগ ছাড়েন।
বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন রিকশা মালিক ঐক্যজোটের ব্যানারে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন চালকরা। এ সময় তারা নানা ধরনের সেস্নাগান দিতে থাকেন।
রিকশা চালকদের দাবি, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মতো উত্তরেও রিকশার নতুন লাইসেন্স দিতে হবে, পুরনো লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে।
তারা বলেন, সরকারের রাজস্ব বাড়ানো ও বৈধ লাইসেন্সধারী রিকশা পেশাজীবীদের স্বার্থে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে চালকদের লাইসেন্স দিতে হবে। এছাড়া অসুস্থ চালকদের জন্য ফ্রি ফ্রাইডে মেডিকেল চিকিৎসা সেবাসহ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স পাওয়া রিকশা পেশাজীবীদের ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার দাবি করেছেন চালকরা।
ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপটে রোজগার 'কমে গেছে' জানিয়ে একজন রিকশাচালক বলেন, 'ব্যাটারি রিকশাওয়ালারা মেইন রাস্তায় চলে আসে। তারা ৪০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা, ২০ টাকায় চলে যায়। এতে আমাদের ট্রিপ কমে গেছে। আর তারা রাস্তায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। তবে যাদের হাত-পা নাই, চলতে পারে না এমন চালকদের অটোরিকশা চালাইতে দেওন যায়।'
ঢাকা সিটি করপোরেশন রিকশা মালিক ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক মো. মমিন আলী সাংবাদিকদের বলেন, পায়ে চালিত রিকশার চালকরা তাদের দাবিগুলো জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে দাবি না মানলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চালকরা।
মমিন আলী বলেন, 'আমরা এক লাখ ৪৩ হাজার লাইসেন্সধারী বৈধ রিকশার মালিক। আমরা সরকারকে ট্যাক্স দিই। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছি। এখনো দাবি পূরণে কোনো আশ্বাস পাইনি। দাবি মানা না হলে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।'
এর আগে গত মে মাসে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত কোনো রিকশা চলাচল করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিদু্যৎচালিত তিন চাকার যানগুলো অটো, ইজিবাইকসহ নানা নামে পরিচিত। দুর্ঘটনার জন্য সড়কে মোটরবাইক এবং ইজিবাইকের চলাচলকে দায়ী করেন তিনি। সে সময় ঢাকার সাবেক দুই মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আতিকুল ইসলামও শহরের মধ্যে এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে তাদের সম্মতি জানিয়েছিলেন।
পরে ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকায় সড়ক অবরোধ করেন চালকরা ও গ্যারেজ মালিকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংক্ষুব্ধ চালকদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে 'জীবিকার' বিষয়টি বিবেচনায় এনে ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করবে পারবে বলে ঘোষণা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল একটি বিধিমালার মধ্যে আনার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং তাদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দেওয়া হবে। যেই এলাকার মধ্যে থেকে তারা রিকশা চালাবেন।
এছাড়া এ ধরনের রিকশা মহাসড়কে বা বড় সড়কে তারা যেতে পারবে না, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রচলিত যেই আইনগুলো আছে সেগুলোতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করার জন্য সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনাও দিয়েছিলেন সাবেক সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনার ওই ঘোষণার পর বাস্তবে দেখা গেছে, কেবল অলি-গলি বা ছোট সড়কে নয়, ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে।