দেশে চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০৬৩ জন। তাদের মধ্যে আগস্ট মাসে মারা গেছেন সবচেয়ে বেশি ২২ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসা নিয়েছেন ১১ হাজার ৩৮৩ জন এবং মারা গেছেন ৭৮ জন। এমনকি নারীরা পুরুষের তুলনায় আক্রান্ত হচ্ছেন কম। কিন্তু পুরুষের তুলনায় নারীরা মারা যাচ্ছেন বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের চলতি বছরের ডেঙ্গুর তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) ইনচার্জ ডা. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৫৫ জন। তাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। ফেব্রম্নয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৩৯ জন এবং মারা গেছেন তিনজন। মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩১১ জন এবং মারা গেছেন পাঁচজন। এপ্রিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৫০৪ জন এবং মারা গেছেন দু'জন। মে মাসে ৬৪৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ১২ জন। জুন মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ৭৯৮ জন এবং মারা গেছেন আটজন। জুলাই মাসে দুই হাজার ৬৩৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১২ জন। এমনকি চলতি মাসের ২৬ দিনে নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পাঁচ হাজার ৬৩ জন এবং মার গেছেন সবচেয়ে বেশি ২২ জন।
তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন, বছরের এই সময়টা দেশ সবচেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বলা যায়, এখন ডেঙ্গু পিকের দিকে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু আরও বাড়তে পারে। তারপর কমবে কিনা সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে ডেঙ্গু কমতে পারে। পরিবেশ অনুকূলে না নিতে পারলে ডেঙ্গু বাড়বে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে নারীরা আক্রান্ত হন ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে মারা গেছেন ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ। পাশাপাশি ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ আক্রান্ত হলেও মারা গেছেন ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৫৬ জনেরই মৃতু্য হয়েছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মৃতু্য হয় ৪৮ জনের। উত্তর সিটিতে সাতজনের। ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃতু্য হয়েছে বরিশাল বিভাগে। তারপর চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন এবং চট্টগ্রাম সিটিতে একজন রয়েছেন। এছাড়া খুলনা বিভাগে মৃতু্য হয়েছে দু'জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শূন্য থেকে ১০ বছরের নিচে মারা গেছেন ১১ জন। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে মৃতু্য হয়েছে আটজনের। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সে মধ্যে ১৪ জনের মারা গেছেন। ৩১ থেকে ৪০ জনের মধ্যে ৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ মধ্যে ১৫ জন মার গেছেন। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে ছয়জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে সাতজন এবং ৮০ বছরের বেশি এক জনের মৃতু্য হয়েছে।
কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার যায়যায়দিনকে বলেন, তিনি বলেন, 'দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা হচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত চলছে। এই সময়টা ডেঙ্গুর জন্য উর্বর সময়। বন্যাকবলিত এলাকা ডেঙ্গু একটু কমবে। তবে অন্যান্য এলাকায় ডেঙ্গু বাড়বে। কারণ থেমে থেমে বৃষ্টিতে নির্মাণাধীন ভবন, ফাঁকা বাড়ি, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, মাঠে, সড়েকের পাশের গর্তে, ড্রেনে পানি জমে থাকবে। এডিস মশার বংশ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ পাবে। তাই এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে।
অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, 'সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু মশার ঘনত্ব, রোগীর সংখ্যা বাড়বে। তাই সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস উচ্চ ঝুকিতে থাকবে। আমরা বলছি, মশা নিধনে নিজ নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এখনি জরুরি পদক্ষেপ না নিলে রোগী সংখ্যা আরও বাড়বে।'