ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) রোববার গণত্রাণ কর্মসূচির ৪র্থ দিন মানুষের দেওয়া ত্রাণে ভরপুর ছিল টিএসসি প্রাঙ্গণ। শনিবার রাত থেকে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় সেগুলো বন্যা আক্রান্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজধানীবাসীর কাছ থেকে 'গণত্রাণ কর্মসূচি' ব্যানারে নগদ টাকা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা সংগ্রহ করেছেন।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সরেজমিন গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। শনিবার তৃতীয় দিন ত্রাণ সামগ্রীতে টিএসসিতে ফাঁকা স্থানের স্বল্পতা দেখা দেওয়ায় এদিন টিএসসিতে শুধু নগদ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাবির কেন্দ্রীয় মাঠসংলগ্ন শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে।
এ সময় বন্যার্তদের জন্য অনুদান করতে বিরামহীন কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকার নানা প্রান্ত থেকে মানুষ যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করছেন। শিক্ষার্থীরা ত্রাণ দিতে আসা গাড়িগুলোর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। সর্বস্তরের মানুষ বন্যা আক্রান্ত এলাকার মানুষের জন্য আনছেন প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী, শুকনো খাবার, পোশাক সামগ্রী, উদ্ধার সামগ্রী যেমন লাইফ জ্যাকেট, মোটা দড়িসহ ইত্যাদি।
সকাল ১১টায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে করে ত্রাণ সামগ্রী নোয়াখালী ও ফেনী এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, এখন আমাদের এই প্যাকেটগুলো ইমার্জেন্সিতে হেলিকপ্টারে করে নোয়াখালী এবং ফেনীতে যাবে। রাতে আমরা ট্রাক পাচ্ছিলাম না। আমরা নিকটবর্তী ফায়ার সার্ভিসে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের ৩টি গাড়ি পাঠায়। আমরা ২টি গাড়ির মাধ্যমে ত্রাণ পাঠিয়েছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, যখনই প্রয়োজন হবে তারা আমাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত।
টিএসসিতে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীরা যথাযথ কাজ করতে পারছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করছে। তাদের আগ্রহ রয়েছে তবে শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় সময় একটু বেশি লাগছে। এমন কোনো দিন হয়নি যে একদিনের ত্রাণ পরের দিন যায়নি বা ত্রাণ আসার তৃতীয় দিন অব্দি পড়ে রয়েছে। প্রতিদিনের ত্রাণ পরের দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যাপার হচ্ছে শনিবার এত বেশি ত্রাণ আসায় টিএসসিতে জায়গার সংকুলান হয়নি পরে রাতের ভেতর সেসব ত্রাণ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেকটাই।
এসময় তিনি ঢাকায় থাকা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা যে কাজটি দুই ঘণ্টায় করতে পারি সে কাজটি আপনারা সাহায্য করলে হয়তো এক ঘণ্টায় করা সম্ভব। আপনারা একটি টিম নিয়ে এলে আমরা আপনাদের সঙ্গে কাজ করব। তবে অবশ্যই আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে কথা বলে আসতে হবে।
এ ত্রাণ বন্যার্তদের মধ্যে কি উপায়ে বিতরণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হেলিকপ্টারের মাধ্যমে যাদের প্রয়োজন আছে ত্রাণের, আমরা তাদের কাছেই যাব। যদি সম্ভব হয় একদম গ্রামের ভেতরে হেলিকপ্টার নিয়ে তাদের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেব।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাত ১১টার হিসাব অনুযায়ী গণত্রাণ কর্মসূচিতে নগদ অর্থ সাহায্য এসেছে ২ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭০ টাকা। কয়েন, চেক এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের হিসাব এর অন্তর্ভুক্ত নয়।