শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

প্রশাসনশূন্য বেরোবি ক্যাম্পাস, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

গাজী আজম হোসেন, বেরোবি
  ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
প্রশাসনশূন্য বেরোবি ক্যাম্পাস, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) সদ্য সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদ।

এর আগে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. শরিফুল ইসলাম, পরিবহণ পুলের পরিচালক ড. কামরুজ্জামান, বহিরাঙ্গন কার্যক্রমের দপ্তরের পরিচালক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী, ছাত্র-উপদেষ্টা ও পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারের গ্রন্থাগারিক প্রফেসর ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. বিজন মোহন চাকী পদত্যাগ করেন। ১১ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট মীর তামান্না ছিদ্দিকাসহ পুরো প্রভোস্টবডি পদত্যাগ করেন। ১৫ আগস্ট শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট শাহিনুর রহমানসহ পুরো প্রভোস্টবডি পদত্যাগ করেন। এ ছাড়া একই দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আরও দুই প্রভোস্ট পদত্যাগ করেন।

এদিকে ১০ মার্চ মেয়াদ শেষ হয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনার। পরে এই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তিনি এখনো এই পদে আছেন কি না এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপ-উপাচার্যের পদ এখনো খালি আছে। কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

প্রশাসনশূন্য ক্যাম্পাসে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধের আগে থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির ফলে বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা, পরীক্ষার ফলাফল, অনেকেই উত্তোলন করতে পারছেন না সার্টিফিকেট মার্কশিটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট, প্রক্টর না থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অনেক শিক্ষার্থী।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অলিউল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় একটা প্রশাসন দিয়ে সেটিই যদি না থাকে তাহলে তো আমাদের নিরাপত্তার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রক্টর না থাকায় যে কোনো মুহূর্তে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। এদিকে প্রভোস্টসহ প্রশাসনে লোকজন না থাকায় আমাদের অনেক সিনিয়র ভাই তাদের সার্টিফিকেট তুলতে পারছে না।

ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া সূচি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন না থাকায় নিয়মিত একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের অনেক ব্যাঘাত ঘটছে। বিভাগগুলোতে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হচ্ছে না। অনেক বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা আটকে আছে। এ কারণে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের একটা বড়সড় সেশনজটে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও হুমকির সম্মুখীন। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলেও আসলে তার বলার কোনো জায়গা নেই কারণ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রশাসন নেই তাই শিক্ষার্থীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। একদিকে সেশনজটের আশঙ্কা আরেকদিকে নিরাপত্তাহীনতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয়প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে আমরা আশা করি সরকার দ্রম্নততম সময়ে এই সংকট দূর করবে। এই সংকট দূরীকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে কোনো ব্যবস্থা আছে বলে আমার জানা নাই। তবে ভিতরে যারা আছে তাদের আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ভিসি নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। ভিসি নিয়োগের পর প্রশাসনশূন্যতা কেটে যাবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু আবারও সভাপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতিতে ভিসি, প্রক্টরসহ যারা পদত্যাগ করেছেন সেই জায়গা আগে পূরণ করা জরুরি। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি অভিভাবক না থাকে সেই জায়গার দায়বদ্ধতা, দায়িত্বহীনতা, জবাবদিহিতা, নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যায়। তাই দ্রম্নত ভিসি, প্রক্টরসহ ফাঁকা জায়গায়টা আগে পূরণ করা এবং যত দ্রম্নত সম্ভব শিক্ষার যে পরিবেশ সেটি ফিরিয়ে এনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি টেনে তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে রাজনৈতিক যে দ্বন্দ্ব সেটি যাতে না থাকে। লাল, নীল, কালো, হলুদ, সবুজ এই গ্রম্নপিং যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকে সেই জায়গাটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আজকের যে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা সেটি পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে