বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগস্ট বিপস্নবের লক্ষ্য পূরণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাহায্য-সহযোগিতা দেবে বিএনপি। তাদেরকেও বিপস্নবের মর্মবাণী উপলব্ধি করতে হবে। যারা বিপস্নবে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে নিয়ে সরকার পরিচালনা করতে হবে।
রোববার সকালে শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে সংগঠনটির সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ শেরে বাংলা নগরে জিয়ার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এই সময়ে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীনসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'অনতিবিলম্বে বিতর্কিত ব্যক্তিদের সরিয়ে প্রয়োজন হলে উপদেষ্টা পরিষদের আরও ছাত্র নেন। যারা বিপস্নবে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে নেন। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের প্রয়োজন নেই। যারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, দুঃসময় চুপ থাকে আর বিজয়ের পরে এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায় ওই ধরনের বুদ্ধিজীবীদের প্রয়োজন নেই। সুতরাং এই অবস্থার অবসান চাই। প্রকৃত বিপস্নবীদের নিয়ে এই সরকার গঠিত হোক সেটাই কামনা করি।'
হাফিজ উদ্দিন বলেন, '২০ দিন অতিবাহিত হয়েছে এখন পর্যন্ত মনে হয় না বিপস্নবীদের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেবলমাত্র আসিফ নজরুল ছাড়া এই বিপস্নবে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে কাউকে দেখিনি। ইশতিয়াক আজিজ উলফাতসহ মুক্তিযোদ্ধারা ৫ আগস্টের আগে এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন, শহীদ মিনারে জনতার কাতারে গিয়ে শামিল হয়েছেন।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উদ্দেশে তিনি বলেন, 'এটি কোনো এনজিও সরকার নয়, বাংলাদেশের জনগণের সরকার। যারা ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।'
হাফিজ উদ্দিন বলেন, 'বিপস্নব কিন্তু সম্পূর্ণ হয়নি। এখনো বিপস্নব থমকে আছে। পুলিশি স্টেট যারা নির্মাণ করেছে বাংলাদেশে, যারা আয়নাঘরের মতো গৃহীত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, যারা আয়নাঘর নামে একটি নির্যাতনকারী টর্চার সেল বানিয়েছে, বহু আন্দোলনকারী, সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলের রাজনীতিকদের গুম করেছে, হত্যা করেছে তারা বহাল তৈবিয়তে নিজ নিজ পদে এখনো আছে। প্রত্যেকটি জেলায় পুলিশ কর্মকর্তারা আগের মতোই আছে। তারাই আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে।'
আয়নাঘরে বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, 'সরকারের উচিত ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সাংবাদিকদের সেখানে নিয়ে গিয়ে দেখানো। কত ঘৃণিত এই নরপিচাসের দল কীভাবে তারা নিরীহ মানুষকে অত্যাচার করেছে, হত্যা করেছে। ওই আয়নাঘরের সৃষ্টিকারীদের কারো কিছু হচ্ছে না। একজনকে মাত্র গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'
সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়াদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সেনাবাহিনীকে বলতে চাই, সেনা বাহিনীকে এমনভাবে রাখবেন, এমনভাবে তাদের আচরণ হওয়া উচিত যাতে মনে না হয় যে তারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। অবিলম্বে যে যেখানে (সেনানিবাসে) আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের তালিকা প্রকাশ করুন। তালিকা প্রকাশে ভয়ের কী আছে। বিপস্নব সফল করতে হলে এই দুর্বৃত্তদের দমন করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, বিপস্নবের কয়েকদিন পরে একটি অতিবিপস্নব সংঘটিত করার চেষ্টা করা হয়েছে যাতে মদদ দিয়েছে কয়েকজন বিচারপতি এবং গোপালগঞ্জে কিছু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দল। কীভাবে তারা এই সাহস দেখায়? তারা সেনাবাহিনীর গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, সেনাবাহিনীকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চাই, আমরা এই বিপস্নবের সফল পরিণতি দেখতে চাই।'
তিনি বলেন, 'সশস্ত্র বাহিনীর কাছে অনুরোধ থাকবে, যতদিন এই বাহিনী থাকবে তারা সবসময় যেন জনগণের পাশে দাঁড়ায়, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করে এবং কখনও ভুলে যাবেন না আপনারা কেউ জনগণের প্রভু নন। আপনাদের আচরণের বিনয় থাকতে হবে। আপনারা জনগণের সেবক একথা সবসময় মনে রাখবেন। আপনাদের আচার-আচরণে মহান আগস্ট বিপস্নবের যেন ক্ষতি না হয় সেটি লক্ষ্য রাখবেন।'
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজকে অনুরোধ থাকবে, বিজয়ের আনন্দে কেউ আত্মহারা হবেন না। আপনারা রাজপথে থাকুন। যেকোনো ধরনের প্রতিবিপস্নবের চেষ্টা হলে সবাই মিলে, বিএনপি আপনাদের সঙ্গে আছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও থাকবে। মূল শক্তি হিসেবে আপনারা ছাত্ররা রাজপথে থেকে প্রতিবিপস্নব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবেন।'
ু